Published : 07 Aug 2022, 12:50 PM
তাইওয়ান ঘিরে উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরলেন ঢাকা সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
রোববার ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি তাইওয়ান প্রসঙ্গেও আলোচনা হয় বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “তিনি (ওয়াং ই) বলেছেন, কিছু রাষ্ট্র আছে পৃথিবীতে, যারা একটু ভুল বোঝে বা চীনকে মিসইন্টারপ্রেট করে… তো, ওই বিষয়ে কথা হয়েছে কিছুটা।”
সেই ‘ভুল বোঝাবুঝির’ বিষয়ে আরও বিশদ জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম উত্তরে বলেন, যেহেতু দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে, এর কতটা তথ্য প্রকাশ করা হবে, চীন তা ঠিক করবে।
”এটাতো আমরা মোটামুটি জানি, যে ঘটনাগুলো এখন ঘটছে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে, চীনের নিজস্ব অবস্থান আছে… এক চীন নীতি, তাইওয়ান বিলংগস টু চায়না- সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নর্মস ফলো করা, এ বিষয়গুলো তারা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের কনভেনশনের জন্য।”
তাইওয়ান ঘিরে উত্তেজনা এবং চীনের গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, “এ ব্যাপারে বিস্তারিত তারা বলেছেন। এটা আলোচনার বিষয় নয়। কারণ আমাদের প্রায়োরিটিতে আরও অন্যান্য জিনিস আছে। মিটিংয়ের সময়, সংক্ষিপ্ত সময়।
”তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যে অবস্থান ‘এক চীন’ নীতি আমরা যে পুনর্ব্যক্ত করেছি, এটার কারণে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে (চীনা মন্ত্রী) বলেছেন যে, জয়েন্ট কোলাবেরেশন, একটা শেয়ার্ড ফিউচার পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের জন্য, সেটা চীন প্রত্যাশা করে এবং বাংলাদেশকে তারা পাশে চায়।”
দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসাবে শনিবার ঢাকায় পৌঁছান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় থেকে দেড় ঘণ্টা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা চলে।
বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে।
বৈঠকে চীনের তরফ থেকে জানানো হয়, নতুন করে আরও ১ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে চীন; সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্য ও সেবা বিনাশুল্কে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশে প্রবেশাধিকার পাবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ সুবিধা কার্যকর হবে।
‘এক চীন’ নীতিতে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশ বলল, বিরোধের সমাধান সংলাপে
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ আর তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে তার এই সফরে যে বৈশ্বিক রাজনীতির বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে, তা অনুমিতই ছিল।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এর আগে বলেছিলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো ইস্যু উত্থাপন করার কিছু নাই। তবে তারা তুললে আমরা প্রস্তুত আছি। অন্য বলয়গুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক কী হবে সেটা আমাদের ইস্যু।
“আমরা চাই না আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কেউ পরামর্শ বা নির্দেশনা দিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চীন বাংলাদেশের একটি বন্ধু রাষ্ট্র এবং তাদের অনেক পরিকল্পনার সাথে আমাদের সম্মতি আছে।”
চীনের অনুসৃত ‘এক চীন’ নীতি অনুযায়ী, তাইওয়ানের আলাদা রাষ্ট্রীয় সত্তা নেই। যদিও তাইওয়ানের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, আর তাইওয়ানিদের চাওয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে ‘এক চীন’ নীতির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের কথা আবারও তুলে ধরে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে সংঘাতের দিকে না গিয়ে সংলাপের মাধ্যমে তাইওয়ান প্রণালীতে চলা বিরোধ মেটাতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।