রিমান্ড শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
Published : 19 Jul 2023, 07:20 PM
জাতীয় পার্টি-জেপি নেতা আব্দুস সালাম মিয়া ওরফে সালাম বাহাদুরকে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার এক তরুণী ও তার মাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
বুধবার তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আকতারুজ্জামান।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আতাউল্লাহ মা ও মেয়েকে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন জানান, রিমান্ড শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
মঙ্গলবার ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে ওই মা ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সালাম হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এ কে এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের পর ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখানো এবং তার বাড়িতে গিয়ে ‘শারীরিক সম্পর্কের’ চেষ্টা করায় স্থানীয়দের মারধরে মৃত্যু হয় সালাম বাহাদুরের।
“গত শনিবার মানিকগঞ্জে ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে ‘জবরদস্তির’ সময় চিৎকারে স্থানীয়রা এসে সালামকে মারধর করে। যদিও সালামের সেখানে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়রা সবাই জানতেন। তারা (মা-মেয়ে) চিৎকার করলে যেন স্থানীয়রা ছুটে আসে, এই বিষয়গুলো ছিল অনেকটা পরিকল্পিত।”
সালামের লাশ শনিবার মধ্যরাতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তখন স্থানীয় দোকানিরা বলেছিলেন, একটি গাড়িতে করে রাতে তার লাশ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়।
ওই ঘটনায় তার ছোট ভাই আব্দুল করিম খলিফা ১৬ জুলাই শেরেবাংলা নগর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
৫২ বছর বয়সী সালাম বাহাদুরের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে। পেশায় ঠিকাদার সালাম জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) অর্থ সম্পাদক ছিলেন।
উপকমিশনার আজিমুল হক বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটি ধানমণ্ডির একটি সুপারশপের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পাশেই সালাম বাহাদুরের বাসা। পাঁচ-ছয় বছর আগে সেখানে মেয়েটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেসময় মেয়েটিকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এই জেপি নেতা।
“কিছুদিন পর মেয়েটি বুঝতে পারে, সালাম তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। পারিবারিকভাবে সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়েটি এই সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান।
“কিন্তু সালাম তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও মেয়েটির পরিচিতজনদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন, সম্পর্ক রক্ষায় চাপ দেন। মেয়েটির পরিবার এ নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ে এবং পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে থাকে।”
ঘটনার দিনের বর্ণনায় আজিমুল হক বলেন, শনিবার মেয়েটির সঙ্গে মোবাইলে সালামের কথা হয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে তাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন সালাম।
“মেয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, তার ঘরে ঢুকে সালাম তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। সে সময় মা-মেয়ের চেঁচামেচি ও চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সালামকে বেধড়ক মারধর করে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে। তাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
“পরে সালামকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় কয়েকজন মাঝপথেই সটকে পড়ে। তখন তার লাশ হাসপাতালের সামনে ফেলে পালিয়ে যায় অন্যরা।”
সালামের মানিকগঞ্জে আসার খবর ওই তরুণী ও তার মা স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন বলে জানান উপকমিশনার আজিমুল।
“ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে সালামকে দ্বিতীয় দফায় বেধড়ক মারপিট করেন। তারা মূলত আহত সালামকে আটকে রেখে অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন।”
তরুণীকে ‘ব্ল্যাকমেইল’, স্থানীয়দের পিটুনিতে মৃত্যু হয় সালামের: পুলিশ