অতিরিক্ত ব্যয় না করে সঞ্চয় করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলছেন, “এখন থেকে সকলকেই কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে, অতিরিক্ত ব্যয় না করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2022, 09:40 AM
Updated : 1 Sept 2022, 09:40 AM

ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বহু দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের জনগণকে আবারও ব্যয় সংকোচনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হলেও এখন যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বের বহু উন্নত দেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং রেশনিং করছে।

“কাজেই আমাদেরকেও সেই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে সেহেতু আমাদের কৃচ্ছ্র সাধন করতে হচ্ছে।

“এখন থেকে আমাদের সকলকেই কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে, কোনো রকমের যেন আমরা কোনো কিছুতেই অতিরিক্ত ব্যয় না করি। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ২৪তম জাতীয় সম্মেলন এবং ৪৩তম কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা ‘চমৎকার’ ভূমিকা রাখছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “... যে সমস্ত প্রকল্প আমাদের একেবারে আশু শেষ করা প্রয়োজন, আমরা সেগুলো দ্রুত শেষ করব। যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো আমাদের ধীর গতিতে হবে। আমরা অহেতুক টাকা ব্যয় করব না।

“কিন্তু যেগুলো আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো আমরা করব। এভাবে আমাদের পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। তাহলেই বৈশ্বিক মন্দা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমরা এইটুকু দেখাতে পারি যে... নাহ, আমাদের এইটুকু শক্তি আছে যে কারও কাছে হাত পেতে আমরা চলব না। আমরা আমাদের মর্যাদা নিয়ে চলব। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব।

“আমাদের সেভাবেই কিন্তু নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকেও গড়ে তুলতে হবে। সবসময় একটা আত্মবিশ্বাস মনে থাকতে হবে, যে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের পথ চলতে হবে।”

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যলেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এই যুগে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্সের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এ লক্ষ্যেই কিন্তু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে করেছি এবং সেই সাথে সাথে আমরা ট্রেনিং ও শিক্ষার ব্যবস্থাও নিয়েছি।

“আমরা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রযুক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ, আঞ্চলিক যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্যতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার উপর সব থেকে জোর দিয়েছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে যে ধরনের পরিবর্তন সূচিত হবে, তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের যে বিপুল শ্রমশক্তি রয়েছে তাদেরকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, আর সেই যুক্ত করতে হলে তাদেরকে ট্রেনিং দিতে হবে, শিক্ষিত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে।

“এক সময় বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে কারও কোনো আকর্ষণ না থাকলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মাত্র ৭ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষা নিত। আজকে তা কিন্তু অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা তার উপরও গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করে শিক্ষার মূলে স্রোতধারায় কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে নিয়ে আসারও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।”

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) সভাপতি এ কে এম হামিদ এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।