বিল পাসের বিরোধিতা করে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ বলেন, “ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আফসোস করবেন।”
Published : 05 Mar 2024, 06:22 PM
বিরোধী দলের বিরোধিতার মধ্যেই দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল, সংসদে পাস হল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। সময় সময় মেয়াদ বাড়ানোর পরিবর্তে আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে এ বিলের মাধ্যমে।
বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
২০০২ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় বিলের খসড়া অনুমোদনের পর মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিল সংসদে পাস হল। আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া বিলে অন্য কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।
বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিল, তখন আপনারা (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ) বলেছিলেন, এটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। এই আইনটা রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যে কোনো কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে।
চুন্নু বলেন, “যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, স্থায়ীভাবে আইনটা করবেন, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্যতো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কি এটা বলতে চান বিএনপি যে আইনটা এনেছিল তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন।”
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, “র্যাব যখন গঠন করেছিল আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। সে র্যাব এখনও টিকে আছে, তারা কাজ করতেছে।
“সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি প্রয়োজন পড়ে, এক/দুই বছর আইনের মেয়াদ বাড়ান। কিন্তু আইনটা স্থায়ী করবেন না, করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আফসোস করবেন।”
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, “আইনটি এনেছিল বিএনপির সময়। ওই সময় জাপা ও আজকের সরকার আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করে। তারপরও আইনটি পাস হয়েছিল। আজকেও পাস হবে।
“আমার প্রশ্ন হল, যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন এক রকম থাকবে না।”
দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে সংসদে বিল
তিনি আইনটি স্থায়ী না করে চার বা পাঁচবছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আইনটি করার সময় বাংলাদেশে ‘অরাজক পরিস্থিতি ছিল’ বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “সেসময় নানা ধরনের অপরাধ হত, তাই হয়ত আইনটি তৎকালীন সরকার করেছিল। আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিল তাৎক্ষণিক বিচার যেন মানুষ পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় সেটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠান যেন এ আইনের মাধ্যমে বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না, অনেকেই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। কারণ একটাই যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। সংসদ সদস্যদের কেউ বলেনি আইনটি বাতিল করে দেন।
“কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। তারা সময় বৃদ্ধি করে দিয়ে আইনটি চালু রাখার কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে। কাউকে উদ্দেশ্য করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না যে এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আইনটি কখন আনা হয়েছিল তা মুখ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে।”
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্বে করেন।