১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত: টিআইবি

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2022, 04:36 PM
Updated : 15 Sept 2022, 04:36 PM

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলে নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

 আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ইসির পদক্ষেপকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যায়িত করে এই আহ্বান জানানো হয়।

সংস্থার গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন: গণতান্ত্রিক সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারে ইসির সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।

“অনেকেই এটিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুতর নেতিবাচক একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।”

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বেশিরভাগের পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে টিআইবি।

ইসি বুধবার যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তাতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল বলেন, “১৫০টি পর্যন্ত আসনে ইভিএম ব্যবহারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে হবে এবং এ বিষয়ে পুনরায় কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে ইভিএম ব্যবহারের রাজনৈতিক, আর্থিক এবং কারিগরি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকসমূহ বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে ইভিএম ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য প্রাপ্তি ও ঝুঁকির বিষয়গুলো দেশবাসীর সামনে স্বচ্ছতার সাথে তুলে ধরতে হবে।”

Also Read: সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএম, সিদ্ধান্ত ইসির

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্যও ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

“সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সুষ্ঠু, অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ না সৃষ্টি করতে পারলে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ভোটবাক্স বা ইভিএমের ব্যবহারসহ সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে।”

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যদি ১৫০টি আসনে হওয়ার মানে হল অর্ধেক আসনে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ হবে।বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, যা দিয়ে ৭০-৮০টি আসনে নির্বাচন করা সম্ভব।

এখন নতুন করে নতুন করে প্রায় দু’লাখ ইভিএম কেনা এবং আগেরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে আগামী সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এখনও যেহেতু ইভিএম নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক আছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ হবে এর রাজনৈতিক, কারিগরি এবং অর্থনৈতিক- এই তিনটি বিবেচনায় এটির কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিস করা।

“আর বর্তমানে এই আর্থিক সংকটের মধ্যে এই বিশাল ব্যয়ের একটা ইনভেস্টমেন্ট, সেটি কতখানি ইতিবাচক ফল দেবে, কতখানি ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, এই বিষয়টা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা দরকার।”

Also Read: ইভিএমের বিরোধিতার কারণ ‘মনস্তাত্ত্বিক’: ইসি

নির্বাচনকালে ইন্টারনেটের গতি হ্রাস কিংবা মোবাইল ফোনের ফোরজি ও থ্রিজি নেটওয়ার্ক বন্ধ না রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন তাদের যে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে, সেখানে যৌক্তিকভাবে তারা বেশ কিছু অংশীজনের কথা বলেছেন। সেই অংশীজনের মাঝে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যমের কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে সোশ্যাল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কথা। এই অংশীজনদেরকে যেন কোনোপ্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়া অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া যেন হয়।

“আমরা সম্প্রতি এক নির্বাচনে দেখেছি, ফোরজি/থ্রিজিকে নিয়ন্ত্রণ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিজেও যেখানে এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে একটা অংশীজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই আমরা মনে করি, এই ধরনের পথ থেকে তাদের সরে আসা উচিৎ।”

নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে আইন সংস্কারের কথা বললেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার কথা বলেননি ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “নির্বাচনকালে সরকারের ভূমিকা কতটুকু নিরপেক্ষ হবে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য আইনি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা কিন্তু কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছি না। এটার প্রয়োজন নাই এবং এটা সাংবিধানিকভাবে সম্ভবও নয়।”