স্ত্রীর লাশ পুঁতে রাখার স্থান কানাডা থেকে ভিডিও কলে দেখালেন স্বামী

এ ঘটনায় স্বামী আরিফুল ইসলাম বাদে তার পরিবারের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 04:20 PM
Updated : 1 June 2023, 04:20 PM

ঢাকার দক্ষিণখানে স্ত্রীকে হত্যা করে কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছিল, পরে কানাডা থেকে ভিডিও কলে তা পুলিশকে দেখিয়ে দেন স্বামী।

বুধবার রাতে দক্ষিণখানের নদ্দায় মোছা. আফরোজার (৪০)  মাটিচাপা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আফরোজার স্বামী আশরাফুল আলম সুমন ভিডিও কলে কানাডা থেকে জানিয়েছিলেন আফরোজাকে হত্যার পর কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছিল।

এ ঘটনায় আফরোজার ভাই আরিফুল ইসলাম পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আসামিদের মধ্যে আশরাফুল ছাড়া বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, আশরাফুলের বাবা শামছুদ্দিন আহমেদ, ভাই সজীব আলম, ভাবি তাহমিনা বাসার ও খালা পান্না চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আশরাফুলকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে তিনি জানান।

‘আপা ম্যানেজ হয়ে গেছে’

এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, “নিখোঁজ হয়েছে জানিয়ে আফরোজার ভাই ২৯ মে থানায় জিডি করেন। আর আমাকে জিডিটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৩০ মে।

ওই দিন তাদের বাড়িতে যান জানিয়ে তিনি বলেন, “একতলা বাড়ির চারিদিক সীমানা দেয়াল এবং অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেখানে তার বাবা, ভাই, ভাবি ও খালার সঙ্গে কথা বলি। অনেক সময় কাটাই। সুমনের খালা পান্না চৌধুরীর মাধ্যমে কানাডায় অবস্থারত সুমনের সঙ্গে কথা বলি।

“সুমন প্রথমে জানায়, সে দ্রুত জরুরি কাজে কানাডায় চলে গিয়েছেন। আফরোজা পরে আসবে কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়।”

রেজিয়া বলেন, তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলেও তাদের কিছু বুঝতে না দিয়ে চলে আসেন তিনি। পরে সুমনের খালার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

“পরদিন অর্থাৎ বুধবার আবার সুমনদের নদ্দার বাসায় যাই। পান্নার সঙ্গে কথা বলার এক ফাঁকে সে জানায়, আপা আফরোজা নেই। এখন কী করব? আমাদের কীভাবে বাঁচাবেন?”

এ সময় সুমনকে কিছু না জানিয়ে তাদের বাঁচানো যাবে বলে অভয় দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

রেজিয়া বলেন, “পান্না চৌধুরী তখন সুমনকে ফোন করে বলে, আপা ম্যানেজ হয়ে গেছে! সব বল আপাকে। তাকে ভিডিও কলে অভয় দেই এবং বলি মরদেহ কোথায়? সুমন বলেন, লাশ উদ্ধার করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার জন্য নগদ ১৫ লাখ টাকা দিবে। আর পরিবারের অন্য সদস্যকে কানাডায় নিয়ে যাবে।”

রেজিয়া বলেন, “আমি আপনাদের বাসায় একা এসেছি। সুতরাং কিছু কী বুঝতে পারছেন না। আমার স্বামী ও ভাইকে কানাডায় পাঠাব। এই কথা বলার পর সুমন বলেন, ভবনের গেইট থেকে বের হয়ে বাম দিকে যেতে। এরপর আমি এগোতে থাকি, ঠিক তখনই আশারাফুল বলেন, এখানেই দাঁড়ান। এখানেই আফরোজাকে মেরে পুঁতে রেখেছি। আমি কিছুটা বালি খুঁড়তেই আফরোজার দেহের অংশ দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমি সিনিয়র স্যারদের জানাই এবং মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

খুনের সঙ্গে কে কে জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আফরোজাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পাশের কক্ষগুলোতে অন্যরা ছিল। অনেক রক্ত ঝরেছে।

তিনি বলেন, “২৬ মে শুক্রবার রাতে আফরোজাকে খুন করা হয়েছে। ওই সময় সুমনের খালা ছিল না। কিন্তু মঙ্গলবার সে আমার আর সুমনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া ও ঘুষ সেধে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। বাড়ি ও আশপাশ অনেক পরিষ্কার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ রক্ত মুছেছে, কেউ গর্ত করেছে এবং কেউ মরদেহ টানতে সহায়তা করেছে।”

গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু পরিষ্কার হবে বলে জানান এসআই রেজিয়া।

তিনি বলেন, “আফরোজার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে ঘটনার রাতে চাচাত বোনকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। তাকেও ফোন করে বলা হয়েছে এক ঘণ্টা পর বাসায় আসতে।

“এই সময়ে মরদেহ পুঁতে রাখতে ও রক্ত ধোঁয়া মোছার কাজ করা হচ্ছিল। ওই সময় বাসার সবাই মরদেহ গুমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।”

‘দ্বন্দ্ব কাবিননামা নিয়ে’

রেজিয়া বলেন, “সুমনের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, জানতে চেয়েছি কেন মারলেন? সুমন বলেন, ফেইসবুকে পরিচয়ের পর তাকে এক বছর আগে বিয়ে করেন। ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে এসে কাবিননামা করেন।“

সুমন আরও জানান, তিনি ৫০ লাখ টাকার কাবিননামা করলেও আফরোজা এক কোটি টাকার কাবিননামার কথা বলতেন এবং এ নিয়েই ঝগড়া বাধে ওই রাতে।

রেজিয়া বলেন, আফরোজা ১৮/১৯ বছর ধরে কানাডায় বসবাস করছেন। তার আগের স্বামীর ঘরের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সুমনের সংসারেই থাকত। তবে বাংলাদেশে এক মেয়ে ও এক ছেলে আসেননি।

হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর ২৮ মে আফরোজার মেয়েকে নিয়েই সুমন কানাডা চলে যান বলে রেজিয়া জানান।

বৃহস্পতিবার রাতে আফরোজার ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, তার বোনকে নীলফামারী নাকি ঢাকায় দাফন করবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন বলে তিনি জানান।

Also Read: খুন করে পুঁতে রাখা হয়েছিল গৃহবধূকে