একাদশে ভর্তির আবেদন শুরু, ক্লাস ৮ অক্টোবর

তিন ধাপের ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে, চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2023, 04:45 AM
Updated : 10 August 2023, 04:45 AM

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের ফলের ভিত্তিতে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম পর্যায়ের এই আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত। এবারও তিন পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, ১০ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত যে কোনো সময় শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রতিদিন রাত ১১ থেকে রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ইন্টারনেটে আবেদনগ্রহণ বন্ধ থাকবে।

আর ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে অনলাইনে ভর্তির আবেদন বন্ধ থাকবে।

২০ অগাস্ট প্রথম পর্যায়ের আবেদন শেষে ২১-২৪ অগাস্ট প্রথম পর্যায়ের আবেদন যাচাই, বাছাই ও নিষ্পত্তি করা হবে। ৩১ অগাস্ট পুনঃনীরিক্ষণে ফল পরিবর্তিত শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে।

১২-১৪ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় পর্যায়ের এবং ২০-২১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল ও প্রথম মাইগ্রেশনের ফল এবং ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল ও দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।

তিন ধাপের ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে, চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। আর ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর।

চলতি বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন।

অনলাইনে আবেদন কীভাবে

শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন করতে হবে www.xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ দশটি কলেজে পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

একজন শিক্ষার্থী তার আবেদনের সময় দেয়া কলেজ পছন্দক্রম ও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফল ও কোটার ভিত্তিতে শুধুমাত্র একটি কলেজেই সিলেকশন পাবেন।

নির্বাচিত শিক্ষার্থী নিজেই অনলাইনে বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি বাবদ ৩৩৫ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চায়ন করতে পারবেন। এই ফি জমা না দিলে শিক্ষার্থীর সিলেকশন ও আবেদন বাতিল হবে।

যেসব শিক্ষার্থী আবেদনকৃত কোনো কলেজেই সিলেকশন পাবেন না, তারা পুনরায় আবেদন ফি ছাড়া আবেদন করতে পারবে।

একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে তার মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি মাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের কেবল এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে, কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করেছে, কেবল তারাই বোর্ডে হাতে হাতে ভর্তির আবেদন জমা দিতে পারবে।

এছাড়া প্রবাসীদের সন্তান ও বিকেএসপি থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভাগীয় বা জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে।

এক্ষেত্রে বোর্ড প্রমাণপত্র যাচাই-বাছাই করে শিক্ষার্থীকে (প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ন্যূনতম জিপিএ এ ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবে) ভর্তির ব্যবস্থা নেবে। 

ভর্তির যোগ্যতা

২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে দেশের যে কোনো শিক্ষা বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যান্য বছরে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে।

বিদেশি কোনো বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমে তার সনদের মান নির্ধারণের পর ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মোট ৯৩ শতাংশ আসন সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা এবং মোট আসনের ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এসব আসনে শিক্ষার্থী না থাকলে সেখানে মেধা কোটার মাধ্যমে ভর্তি করানো হবে।

গ্রুপ নির্বাচন

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে কোনো গ্রুপে (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়) ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানবিক ও ব্যবসায়- এই দুই গ্রুপের একটিতে আবেদন করতে পারবে।

মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

যে কোনো গ্রুপ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সংগীত গ্রুপের যে কোনো একটিতে আবেদন করতে পারবেন।

মেধাক্রম নির্ধারণ

  • সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গ্রেড পয়েন্ট ও প্রাপ্ত নম্বর সমতুল্য করে হিসাব করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন বছরের গ্রেড পয়েন্ট ও প্রাপ্ত নম্বর সমতুল্য করে হিসাব করতে হবে।

  • বিজ্ঞান গ্রুপে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান মোট নম্বর প্রাপ্তদের মেধাক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনতে হবে। যদি তারপরেও প্রার্থী বাছাইয়ে জটিলতা নিরসন না হয়, তবে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়নে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনতে হবে।

  • মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের ক্ষেত্রে সমান মোট নম্বর বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনতে হবে।

  • এক গ্রুপের প্রার্থী অন্য গ্রুপে ভর্তির ক্ষেত্রে জিপিএ একই হলে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসন না হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনতে হবে।

স্কুল ও কলেজ এবং সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত যোগ্যতা সাপেক্ষে স্ব স্ব বিভাগে (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবেন। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব বিভাগে ভর্তি নিশ্চিত করেই কেবল অবশিষ্ট শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। 

ভর্তি ফি 

  • ঢাকা মহানগরের এমপিওভুক্ত কলেজে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের কলেজে ভর্তির ফি হবে ৩ হাজার টাকা। জেলা পর্যায়ের কলেজে দুই ভার্সনের ভর্তির ফি ২ হাজার ও উপজেলা বা মফস্বল পর্যায়ের কলেজে দুই ভার্সনে ভর্তির ফি দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

  • ননএমপিও বা আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ফি, সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার কলেজের বাংলা ভার্সনের জন্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের জন্য সাড়ে ৮ হাজার টাকা।

  • ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার ননএমপিও কলেজে বাংলা ভার্সনে ভর্তির জন্য ৫ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির জন্য ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কলেজের বাংলা ভার্সনে ৩ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ৪ হাজার টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উপজেলা বা মফস্বল পর্যায়ের কলেজে বাংলা ভার্সনে আড়াই হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

  • সরকারি কলেজগুলো সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি ফি নেবে। দরিদ্র, মেধারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কলেজগুলোকে ফি যতদূর সম্ভব মওকুফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

শিক্ষা বোর্ড ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন করার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩৫ টাকা ভর্তি ফি নেবে।

যেসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি নিষিদ্ধ

স্থাপনের অনুমতি আছে কিন্তু পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি নেই, এমন কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে কোন অবস্থাতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না।

পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত অথবা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে অনুনোমোদিত ক্যাম্পাস এবং অনুনোমোদিত কোন বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।