“আমার খারাপ লাগে একটি জায়গায়, গণজাগরণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অনেককে হত্যা করা হয়েছে,” বলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
Published : 05 Feb 2023, 09:34 PM
গণসংগীত, কবিতা আবৃত্তি আর আলোর মিছিলে শাহবাগ আন্দোলনের এক দশকপূর্তি উদযাপন করলেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকরা।
রোববার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে গণজাগরণের সহযোগী সংগঠন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী।এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আল আমিন বাবু, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মকবুল হোসেন গান গেয়ে শোনান। কবিতা আবৃত্তি করেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও রবীন আহসান।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের (বোয়ান) সভাপতি কানিজ আকলিমা সুলতানা বলেন, “দশ বছর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমরা বিস্ফোরিত হয়েছিলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। খুবই চ্যালেঞ্জের মুখে বিচার হয়েছে।
"দেশবাসী সম্মতি দিয়েছিল ওই আন্দোলনে। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি থেমে থাকেনি, তারা কোনো না কোনোভাবে আমাদের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উপর আক্রমণ করছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের লড়াই চলমান রাখতে হবে।"
গণজাগরণ মঞ্চের অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে এর অন্যতম সংগঠক কামাল পাশা বলেন, “১০ বছর আগে গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল, আরও ১০০ বছর পরও এটাকে মানুষ মনে রাখবে। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা আমরা করেছি গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে।
"সেদিন আমাদের একটা স্লোগান ছিল- 'শাহবাগ জেগে থাকে, শাহবাগ ঘুমায় না'। আজকে এটা প্রমাণিত শাহবাগ আসলে ঘুমায় না। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখনও শেষ হয় নাই। ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। এই চক্রান্ত যদি আবার মোকাবেলা করতে হয়, এই শাহবাগ আবার জেগে উঠবে।”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “এই শাহবাগ চত্বরে তরুণরা জেগে উঠেছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে, সেই যাত্রা এখনও অব্যাহত আছে।
"শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে সব কাজ শেষ হয়ে যায়নি, যতদিন পর্যন্ত না সাম্প্রদায়িকতা দূর করা যাবে, যতদিন পর্যন্ত না অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব, ততদিন পর্যন্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির আন্দোলন বলেন অথবা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কথা বলেন, কোনোটিই পূর্ণতা পাবে না।"
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের স্মৃতি স্মরণ করে সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “এই শাহবাগে আমরা দিবারাত্রি জেগে জেগে গান করেছি, প্রতিবাদী স্লোগান দিয়েছি। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার পতন চেয়েছি। আমরা মনে হয়, সেটি আমাদের স্বাধীনতা উত্তরকালে একটি সোনালী সময়।
"আমার খারাপ লাগে একটি জায়গায়, গণজাগরণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় ১৬ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, তার এখনও বিচার হয়নি। এছাড়া সারা দেশে অনেককে খুন করা হয়েছে। আজকে আমরা তাদের স্মরণ করছি।"
অনুষ্ঠানে সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ আল-কাফি রতন, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আরিফ জেবতিক, 'স্লোগান কন্যা' লাকীসহ গণজাগরণ মঞ্চের অনেক সংগঠক ও কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক খান আসাদুজ্জামান মাসুম ও এফ এম শাহীন।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় হলে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র-জনতা; গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ।
এক পর্যায়ে শাহবাগেই দিনের পর দিন অবস্থান নিয়ে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করে শাহবাগে জড়ো হতে থাকে এবং সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে।
ওই আন্দোলনের মুখেই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আইন সংশোধনের ঘোষণা দেয় এবং পরে তা কার্যকরও হয়। এর আগে আইনে শুধু সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আপিলের সুযোগ ছিল। কিন্তু আইন সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পায়। পরে বিচারে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয় ও তা কার্যকরও হয়।
তবে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন থেমে থাকেনি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মন্ধতার বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।