রাজধানীর এলেনবাড়িতে গাড়ি থেকে এক নারী ও এক পুরুষের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুজনের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য জানা গেলেও কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
গাড়ির ভেতর একটি ছোট বোতলে ‘কিছু আলামত’ পাওয়া গেছে জানিয়ে মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বোতলটি পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হবে। সিআইডির ক্রাইমসিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গাড়িটি থানায় এনে রাখা হয়েছে।”
বুধবার ভোরে এলেনবাড়িতে সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার একটি পুকুরের ধারে রাস্তার ওপর রাখা ছিল মেরুন রঙের সেডান গাড়িটি। কভার দিয়ে ঢাকা থাকলেও গাড়ির ইঞ্জিন চালু ছিল, যা দেখে ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরা লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে তারা ঢাকনা সরিয়ে পেছনের আসনে এক নারী এবং এক পুরুষের নগ্ন দেহ দেখতে পান।
স্থানীয়রা ওই পুরুষটিকে চিনতে পেরে তার ভাইকে ফোন করে জানায়। পরে তার ভাই এসে নিজে ওই গাড়ি চালিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের গ্যারেজে নিয়ে রাখেন। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গ্যারেজ থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় বলে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহ আলম জানান।
তিনি বলেন, যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন মোল্লার বয়স ৫৩, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) অফিস সহায়ক (সিভিল স্টাফ) ছিলেন তিনি। ওই স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসাতেই তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন।
তার সঙ্গে পাওয়া গেছে মৌসুমী আক্তার রানী নামের ৪২ বছর বয়সী এক নারীর লাশ, তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায়। ঢাকায় তিনি কোথায় থাকতেন, তা জানা যায়নি।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেলোয়ারকে ওই এলাকার লোকজন ভালভাবেই চেনে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ওই প্রাইভেট কার তার নিজের। চাকরির বাইরে রাতে তিনি অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ার করতেন। ভোরের দিকে বাসায় ফিরতেন।
“মঙ্গলবার রাতেও তিনি রাইডে বের হয়ে যান। তার ভাই ভোরে ফোন পেয়ে স্টাফ কোয়াটারের কাছে পড়ে থাকা গাড়িতে দুজনকে মৃত অবস্থায় পান।
মাহমুদ খান বলেন, “গাড়িতে মৌসুমী আক্তার রানীর একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। সেখান থেকে তার ভাই জালাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিই রানীকে শনাক্ত করেন। রানীর বাড়ী মুন্সীগঞ্জে, দুই সন্তান রেখে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তবে ঢাকায় তিনি কোথায় থাকতেন, কী করতেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তার ভাই।”
রানীর মোবাইলে অনেক ফোন নম্বর পাওয়া গেছে, যেগুলো বিভিন্ন রিকশাওয়ালা বা অটোরিকশা চালকের। তাদের সাথে যোগাযোগ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, রানী এসব রিক্সা ও অটোরিকশার নিয়মিত যাত্রী ছিলেন। ফোন পেলে তারা রানীকে বিভিন্ন স্থান থেকে উঠিয়ে নিয়ে গন্তব্যে নামিয়ে দিতেন।”
তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, “দেলোয়ার ও রানীর মধ্যে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই। ধারণা করা হচ্ছে তারা মাদক বা উত্তেজক কোনো কিছু সেবন করে যৌনকর্মের পর গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরপর সাফোকেশনে বা অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে।”
এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন দেলোয়ারের বড় ভাই মিন্টু মোল্লা।
তিন বছর আগেও মিলেছিল লাশ
পুলিশ জানায়, প্রায় তিন বছর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এলেনবাড়ি সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে একটি ভবনের ছাদে ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া গিয়েছিল।
সে সময়ের তেজগাঁও থানার ওসির দায়িত্বে থাকা সালাউদ্দিন মিয়া এখন রয়েছেন পল্টন থানার ওসির দায়িত্বে। জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মৃতদেহটি ছাদে বস্তাবান্দি অবস্থায় ছিল। পরে জানা যায়, তিনি ছিলেন একজন ভাসমান যৌনকর্মী।”
কীভাবে ওই নারী সেখানে গেলেন, কে বা কারা তাকে হত্যা করে বস্তাবন্দি লাশ ফেলে গেল, সেসব তথ্য তদন্তে জানতে পারেনি থানা পুলিশ। পরে মামলাটির তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে।
সেই তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (উত্তর) জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ঘটনায় তারা এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেন। তবে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।