কয়েক মাসের মধ্যে ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ প্রত্যাশা সিইসির

নির্বাচন কোন ব্যবস্থাপনায় হবে সেই প্রশ্নে দেশের দুটি বড় দলের অনঢ় অবস্থানে উদ্বেগ থাকলেও আশা ছাড়ছেন না কাজী হাবিবুল আউয়াল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2023, 04:11 PM
Updated : 23 Feb 2023, 04:11 PM

নির্দলীয় সরকার না পেলে বিএনপি ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাখলেও সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা ছাড়েননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বরং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে’ রাজনৈতিক সমাঝোতার আশা দেখছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার আগারগঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিবদের সামনে এই আশার বাণী শোনান সিইসি।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের প্রতিনিধি দলে কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষকও উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কোন ব্যবস্থাপনায় হবে সেই প্রশ্নে দেশের দুটি বড় দলের অনঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকলে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আছে বলে মন্তব্য করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তারপরও আশা ধরে রাখার কথা শুনিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি আগামী কয়েক মাসে হয়ত দেখব একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছে এবং সব দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের বিভিন্ন দল থেকে বলা হয়েছে, তারাও বিশ্বাস করবেন যে একটি সমাঝোতা হবে। আমরাও আশাবাদী।”

আগামী নির্বাচন ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবং ফলপ্রসূভাবে’ হবে বলেও প্রত্যাশা রাখেন সিইসি।

সমঝোতা না হলে নির্বাচনে যে ঝুঁকি তৈরি হবে, সে কথা তুলে ধরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “যেমন মানা (নির্বাচন) হল না, বা একটি ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে ফেলা হল। মানুষ বিপদগ্রস্ত হল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। আমি সেটাই বলছি। আমরা চাই না এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক।”

সেসব জটিলতা এড়াতে ক্ষমতাসীন দলকে সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “প্রধানতম দল, সরকারে অধিষ্ঠিত দলের প্রতিও আহ্বান থাকবে, আপনারাও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যান বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিতে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনটাকে যেন অবিতর্কিতভাবে তুলে আনতে পারি। পুরো জাতির কাছে এই নির্বাচনটাকে যেন একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে ও বিদেশে সেই স্বীকৃতি লাভ করতে পারি “

তার ভাষায়, আগামী নির্বাচন দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য’ হয়েছে– এমনটাই দেখাতে চায় নির্বাচন কমিশন।

“তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। বিভিন্ন পক্ষ-বিপক্ষে মূল যে বিভক্তিটা... ‘নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে’ এবং ‘নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের আমলে হবে’– সেটার নিরসন কিন্তু এখনও হয়নি। এই প্রশ্নে কিন্তু দুটি দল এখনো অনঢ় অবস্থানে আছে।”

এই অনঢ় অবস্থান দেশের জন্য ‘বিপদজনক’ মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “যদি নির্বাচন অনঢ় অবস্থানের মধ্যে হয় এবং কোন একটি বড় দল অংশগ্রহণ না করে, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বলব- নির্বাচনের মূল ফলাফলের ওপর একটি ঝুঁকি থাকতে পারে।”

এ ক্ষেত্রে ইসির সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরে সিইসি বলেন, “আমরা নির্বাচন করব সংবিধানের বিধান অনুযায়ী। যেটা বর্তমানে বহাল আছে। সেভাবে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। একইভাবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সকল রাজনৈতিক দল- প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলো যেন অতি অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

“তারা যেন নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করেন। কারণ নির্বাচনে এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে ইফেকটিভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে প্রত্যাশিত ভারসাম্য সৃষ্টি হবে না।”

Also Read: ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের দৃষ্টিতে সিটি ভোট ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “এটা ছিল অ্যাকাডেমিক ডিসকাশন। জানতে চেয়েছে পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে। আর স্বচ্ছতার জন্য অবশ্যই গণমাধ্যম লাগবে। পর্যবেক্ষক লাগবে। মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকরা বস্তুনিষ্ঠভাবে রিপোর্ট করতে পারলে তাহলে অনেক বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতে পারে। প্রতিনিধিরা কোনো পরামর্শ দেননি।”

কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষকের বিষয়ে ইসি ‘খুবই উন্মুক্ত’, এক্ষেত্রে স্বচ্ছতাও ‘থাকবে’।

“গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচিত হয়েছে। আমরা বলেছি সহযোগিতাটা যেন অব্যাহত থাকে। নির্বাচনকে আরো বেশি সহজ সরল ও গণমুখী কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে সার্কভুক্ত দেশে যদি গবেষণা হয়… একটি সমঝোতা যদি হয়- সেটাও আন্তর্জাতিকভাবে মেনে চলার একটি বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে,” বলেন সিইসি।

প্রতিনিধি দলে নেপালের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “প্রতিনিধিরা আশা করেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনটা যেন সুন্দরভাবে হয়।”

‘শান্তিপূর্ণ ও পক্ষপাতহীন’ নির্বাচন চান পর্যবেক্ষকরা 

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম-ইএমএফ বলেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ এবং পক্ষপাতহীন’ হবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা। 

সিইসির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে ফোরামের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। ইএমএফ এর সদস্যরা ছাড়াও সংস্থাটির আমন্ত্রণে মানবাধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশে সফররত জার্মানি, নেপাল ও ভারতের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠক শেষে নেপালের ঝালনাথ খানাল বলেন, “আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। পারস্পরিক মত বিনিময়ের এটা বড় সুযোগ। আমরা আশা করি, পক্ষপাতহীন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে। সকল নাগরিক তাদের ভোটাধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করবে।” 

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও ইসি আমন্ত্রণ জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ২০১১ সালে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ঝালনাথ।

সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

ইএমএফ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলীর নেতৃত্বে আমন্ত্রিত অতিথি, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অংশ নেন এ বৈঠকে।