এমন ক্ষেত্রে যে বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজন ছিল, যার ঘাটতি দেখছেন তিনি।
Published : 27 Aug 2023, 11:59 PM
ব্রিকসে যুক্ত হতে ছয়টি নতুন দেশ নির্বাচিত হলেও তাতে বাংলাদেশের নাম না থাকার জন্য কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির।
তিনি মনে করেন, এমন ক্ষেত্রে যে বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজন ছিল, যার ঘাটতি ছিল।
প্রত্যাশা পূরণ এখন না হলেও ব্রিকসের সদস্য না হতে পারার ব্যাখ্যা দিয়ে সামনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার পরামর্শ সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের।
হুমায়ুন কবির রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউট এ যোগ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়নি দেখে তিনি মোটেই অবাক হননি।
“গত কয়েক মাস ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমন নিশ্চয়তা দিচ্ছিলেন কিংবা আত্মবিশ্বাসী যেসব বক্তব্য দিচ্ছিলিন, তা থেকে আমিও কিছুটা আশা করেছিলাম। কিন্তু আমি একেবারে অবাক হইনি কারণ, কারণ আপনি যদি দেখেন, যেসব দেশ তালিকায় রয়েছে, বিশ্বে বহুপাক্ষিক পরিমণ্ডলে তাদের অবস্থান বাংলাদেশ থেকে সামনে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয় ইনসাইড আউটের এ পর্বটি।
গত জুন মাসে জেনিভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিকসের সভাপতি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদানের বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। এরপর জুনের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে সরকার।
চলতি মাসের ২৪ তারিখ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রিত হয়ে যোগও দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনেই ছয়টি দেশকে নতুন করে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেগুলো হল- আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
৬ দেশকে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ
বাংলাদেশ থেকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা ইথিওপিয়ার সদস্য হওয়ার বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হুমায়ুন কবির বলেন, “এবারের ব্রিকস সম্মেলনের ফোকাস ছিল ব্রিকস ও বহুপাক্ষিক ফোরামে আফ্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে আসা। সেজন্য আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ মিশর এবং ‘আফ্রিকান সৌহার্দ্যের’ কেন্দ্রে থাকা ইথিওপিয়া সদস্য হচ্ছে।
“আফ্রিকার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে থাকার কারণে ইথিওপিয়া তালিকায় এসেছে। আফ্রিকান ইউনিয়নের সদরদপ্তর ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায়। সুতরাং এখানে আফ্রিকান সৌহার্দ্যের বিষয় কাজ করেছে।”
ব্রিকসের সদস্যভুক্তির তালিকায় নাম না আসার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, “এটার (ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তি) প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু এখন হয়নি। সুতরাং এটা সরকারের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। যদি এটার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তা ভালো হবে।”
বহুপাক্ষিক পরিমণ্ডলে শক্তিমানদের অবস্থান, তাদের ক্ষমতার রাজনীতি এবং স্বার্থের বিষয় সেই ব্যাখ্যায় আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সদস্যদের মতৈক্যের বিষয় থাকার কথা তুলে ধরে হুমায়ুন কবির বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে আমাদেরকে আমাদের তুলনামূলক শক্তি ও দুর্বলতার বিষয় মেনে নিতে হবে। সুতরাং এটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন, যাতে জনগণ স্পষ্ট ধারণা পায়। বিশেষ করে এক্ষেত্রে।”
এই ধরনের বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার জন্য বড় রকমের প্রস্তুতির প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
হুমায়ুন কবির বলেন, “বাংলাদেশ যেহেতু ব্রিকসের সদস্য হতে চায় এবং এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ ধরনের বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রচুর কূটনৈতিক দেনদরবার ও সম্ভাব্য সদস্য কিংবা বর্তমান সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হওয়া দরকার উচিৎ।
“এখানে অন্যান্য প্লেয়াররাও রয়েছে, যারা হয়ত আমাদের সমর্থন করতে পারে। আমি নিশ্চিত নই, বাংলাদেশের এ ধরনের অগ্রবর্তী কাজগুলো করেছে কি-না।”
কী কী শর্ত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সদস্যপদ দেওয়া হবে, তার সবগুলো বিবেচনায় নিয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষক।
তিনি বলেন, জিডিপি একটি যোগ্যতা ছিল। যেটাতে বাংলাদেশ সদস্য হওয়ার যোগ্য ছিল। আরেকটা ছিল আন্তর্জাতিক সুনাম।
“সম্মেলন শেষ হওয়ার পর গণমাধ্যমে এসেছে যে, কোনো কোনো দেশ প্রস্তাব করেছে, সদস্য হতে চায় এমন দেশ যেন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে না থাকে। সুতরাং এটি একটি কারণ হিসাবে কাজ করতে পারে, যেটা সম্ভবত বাংলাদেশের স্বার্থের বিপরীতে গেছে।”
কিন্তু পশ্চিমাদের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা ইরানের সদস্যা হতে চলার বিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, “ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনকারী রয়েছে। প্রথমত ইরানের তেল সম্পদ, দ্বিতীয়ত একটি আঞ্চলিক শক্তি। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরব দুটি প্রধান প্লেয়ার। সুতরাং রাশিয়া ও চীন উভয়ই চীনকে চেয়েছে।
“তারা চেয়েছে, আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছু দেশকে চান তাহলে ইরান পাদপ্রদীপে চলে আসে, সংযুক্ত আরব আমিরাত আসে এবং মিশর এসেছে আফ্রিকা থেকে। নিষেধাজ্ঞা অধীনে থাকা সত্ত্বেও ইরান নিজের যোগ্যতায়, তাদের বিষয়ে অনেক প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও তাদের ক্ষমতাবান সমর্থক রয়েছে, যারা তাকে এর মধ্যে চেয়েছে।”
ইরানের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমার অনুমান হচ্ছে, ব্রিকসের কিছু পেশিশক্তি দরকার। ইরান হয়ত পশ্চিমের বিরুদ্ধে কিছুটা পেশিশক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে, যেটাকে ব্যবহার করা যাবে। দ্বিতীয়ত ইরান তেলসমৃদ্ধ দেশ।
“যদি আপনি দেখেন, কারা ব্রিকসকে পরিচালিত করছে, তাহলে চীন তার অন্যতম। এ কারণে চীন এমন দেশকে ব্রিকসে চাইবে, যেটা তেলসমৃদ্ধ। একই জিনিস ভারতের জন্য। যদিও ইরানের বিষয়ে ভারতের কিছু অনিচ্ছা রয়েছে, তবুও ইরান থেকে উপকারের বিষয়ে দেশটি দেখেছে। কেননা, সেখান থেকে তেলের সরবরাহ পাওয়া যাবে।”
যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসা হুমায়ুন কবির পাঁচ সদস্যদের ব্রিকসে বড় তিন দেশের প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ব্রিকসে ভারত, চীন ও রাশিয়া যদি এক পক্ষে থাকে, তাহলে খেলা আপনার পক্ষেই থাকবে।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার স্বার্থের মধ্যে পশ্চিমা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিপরীতে পেশিশক্তি আর বিশ্বাসযোগ্যতা নিরিখে একটি বিকল্প শক্তি বা কোনো একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয় রয়েছে।্
ব্রিকস সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কয়েকটি কারণে এই শীর্ষ সম্মেলন অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। বিশেষ করে ইউক্রেইন যুদ্ধের পরে চীন, রাশিয়া আর ভারত কিংবা গ্লোবাল সাউথ কী বলছে, সেটার গুরুত্ব আছে।
“আমার মনে হয়, এই সময়ে বিশ্ব মিডিয়া এটাতে খুব আগ্রহী ছিল, খুব ভালোমতো কভার করেছে। এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বড় শক্তিগুলো এতে আগ্রহী ছিল। এবং আমরা বাংলাদেশের অবস্থান দেখেছি। বড় টেবিলে একটা জায়গা করে নেওয়াও আমার মতে, একটা সান্ত্বনার জায়গা।”
‘পরাশক্তির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ’
দক্ষিণ এশিয়ায় পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে গেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, “আমরা এক ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছি। কেননা গত কয়েক বছরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। এ কারণে যেসব দেশ চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে নিবিড়ভাবে দেখছে। বিশেষ করে সীমান্তে চীনের সঙ্গে বিরোধের পর ভারতও এই প্রতিযোগিতামূলক ইসুতে গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
“এসবের পরও বাংলাদেশ চীনের উন্নয়নমূলক সহযোগিতার উপকারভোগী। যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারি চীন বাংলাদেশকে কী অফার করছে এবং বাংলাদেশের উপর চীনের কী প্রভাব রয়েছে।”
জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা উচিৎ মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
চীন-ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি এবং সেটার তৈরি পোশাক ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আপনি যদি এই চক্রটা খেয়াল করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এই চক্র যদি আঘাত লাগে, তাহলে আমাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে।
“সুতরাং বাংলাদেশকে যদি এগিয়ে যেতে হয়, সবগুলো প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে সুন্দর কূটনীতি নিতে হবে, যাতে আমরা ভারতের কাছ থেকে ধারণা নিতে পারি। ভারত এটা খুব সুন্দরভাবে করতে পেরেছে, যখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু এবং রাশিয়ার কাছ থেকেও উপকার পাচ্ছে।”
পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বিষয়ে ‘জাতীয় ঐক্যমত্য’ থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে হুমায়ুন কবির বলেন, “যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে প্রধান রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা। এটা হলেই কেবল কূটনীতিকরা কাজ করতে পারবে।
“যদি কোনো জাতীয় শক্তি বা জাতীয় সক্ষমতা না থাকে, তাহলে আমরা বাইরে কী বলব এবং কী নিয়ে যাব? সুতরাং যদি না আমাদের প্রধান অংশীজনদের মধ্যে মতৈক্য ও বোঝাপড়া হয়, তাহলে কেবল কূটনীতিকদের উপর বেশি নির্ভর করে কার্যসিদ্ধি হবে না। যে, এটাই হচ্ছে আমাদের স্বার্থ, এর বিপরীতে আমরা ভূরাজনৈতিক খেলায় পড়ব না।”
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি জানি না আসলে কী আলোচনা হয়েছে। তবে, আমি বুঝতে পারি, অর্থনৈতিক ইস্যু, রোহিঙ্গা ইস্যু, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং আমাদর দিক থেকে সরকারের ধারাবাহিকতার বিষয় উঠানো হয়েছে আর চীন যা বলার বলেছে।
“এটা সেখানে থাকতে পারে, কিন্তু সরাসরি নয়। কেননা এটা আমাদের নির্বাচন, তাই অন্য ইস্যুর সূত্র ধরে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নে হুমায়ুন কবির বলেন, গত ১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের একটা পছন্দ থাকলেও থাকতে পারে।
“তবে, ভারতসহ আমাদের সব বন্ধু রাষ্ট্র এই বাস্তবতা স্বীকার করেছে যে, পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভূক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য।”
যুক্তরাষ্ট্রের সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ চাওয়ার অভিযোগ এবং এই দ্বীপের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এই দ্বীপের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ‘অতটা নয়’ বলে মনে করেন তিনি। তবে ‘রাজনীতির হাতিয়ার বা রাজনীতির ফুটবল’।
তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো গুরুতর বিবৃতি দেওয়ার আগে, এটা তথ্য ও সংখ্যার ধারা প্রমাণিত হতে হবে। কারণ এটা খুবই গুরুতর বিষয়। এই বিবৃতি এবং এটাকে অস্বীকার করে আমেরিকার বিবৃতিও দেখেছি।
“এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা, এর সঙ্গে গুরুতর জাতীয় ইস্যু বা জাতীয় স্বার্থের ইস্যু। এটা গ্যালারির জন্য, যেটা অন্য পক্ষও বলেছে। এখন এটা নিরব আছে, এটা সেই অবস্থায় থাকুক।”
‘প্রতিযোগিতার বিশ্বে টিকতে প্রস্তুতি দরকার’
উন্নত দেশের যাত্রায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে প্রস্তুতির জন্য শক্তি ব্যয় করার দরকার বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির।
বর্তমান সময়ে পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী হওয়া উচিৎ, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দারিদ্র্য থেকে মানুষকে উত্তরণের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এখন কাজ করছে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
“দ্বিতীয়ত, আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল থেকে উত্তরণ করছি। তার মানে হচ্ছে, আমরা যেসব সুবিধা পেয়ে আসছিলাম, সেগুলো চলে যাবে। সুতরাং আমাদের অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিবেশের দিকে যাত্রা করতে হবে। আমাদেরকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আমাদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। যাতে উচ্চ উন্নয়ন সক্ষমতা দিয়ে সেই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে চালিত হওয়া যায়।”
শিক্ষার সংস্কার, দক্ষতা উন্নয়নের পদ্ধতির উন্নতি, প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির আধুনিকায়ন, আমলাতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “অর্থনীতি হবে চালিকাশক্তি। অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি জারি রাখা হবে কেন্দ্রবিন্দু। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক জায়গায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি-নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে এবং সেটা অব্যাহত রাখতে হবে।”
সরকারি কর্মকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের তুলনা করে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি বলতে পারি, গত ১০ কি ২০ বছরে আন্তর্জাতিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠার আকাঙ্ক্ষা ভারতের মধ্যে দেখা গেছে। তারা জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের সদস্য হতে চাইছে।
“১৯৯৪ সাল থেকে এনিয়ে দেন-দরবার চলছে। ভারত এর অংশ হতে চাচ্ছে এবং স্থায়ী পরিষদের আসনে বসতে চাচ্ছে। সুতরাং ভারতের লক্ষ্য ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যক্রম খুব শক্তিশালী। সে তুলনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা খুবই মাঝারি।”
তিনি বলেন, “কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারত আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। তার মানে এই নয় যে, আমরা তাদের মত হতে পারব না। নিশ্চয় আমরা সে রকম করতে পারব, তার জন্য আমাদের কূটনীতিতে নতুনভাবে দৃষ্টি ফেলতে হবে।
“যেহেতু আমরা বিবর্তনের পর্যায়ে রয়েছি, আমাদেরকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝতে হবে। আমাদেরকে আরও সম্পৃক্ত হতে হবে, সুযোগ হলে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিজের স্বার্থের জন্য প্রভাব তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সেই সম্ভাবনা রয়েছে। এখন সেটাতে শক্তি ব্যয় করা দরকার।”
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ত্রিমুখী ‘জটিল পরিস্থিতির’ মধ্যে পড়ে গেছে বলে মনে করছেন হুমায়ুন কবির।
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চীনের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহী নয় কিছু রোহিঙ্গা ও পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগীরা।
“সুতরাং আমরা ত্রিমুখী জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। একদিকে রোহিঙ্গা আমাদরে জন্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে উঠছে, আরেকদিকে বাইরে থেকে অর্থ আসা কমে যাচ্ছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানোর বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছে কিন্তু আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ইউক্রেইন যুদ্ধসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের শরণার্থী সংকট রোহিঙ্গা সঙ্কট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেটা আর্থিক সহযোগিতাকে প্রভাবিত করছে। এটা সত্যিকারের উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের দিক থেকে আমরা বলেছি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা গ্রহণ করেছে যে, এটা নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে।
“বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমার এই সমস্যা তৈরি করেছে। আমরা কিছু সময়ের জন্য তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে তারা যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণভাবে, মর্যাদা সঙ্গে এবং স্থায়ীভাবে ফিরে যেতে পারে। তা না হলে, আমরা সমস্যায় আছি, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এটা আঞ্চলিক সমস্যায় পরিণত হচ্ছে।”
পাইলট প্রকল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে আরও আলোচনা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ চীনকে বলতে পারে, কেবল তাদের চেষ্টার উপর রোহিঙ্গারা পুরোপুরি আস্থা রাখছে না, তাহলে আমরা অন্য আন্তর্জাতিক প্লেয়ারদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারি কি-না, যেমন আসিয়ান।
“যাতে তারা যেভাবে নিয়ে যাক না কেন, রোহিঙ্গাদের উপর পরবর্তী আচরণের বিষয়ে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা যায়। হয়ত চীন এতটা এগিয়ে কাজ করবে না। তবে, আমরা আসিয়ান, জাতিসংঘ এদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারি, যাতে রোহিঙ্গারা আস্থা পায়।”