টিকটকারদের পুল পার্টির আসর বসেছিল ধামরাইয়ে।
Published : 03 Nov 2022, 10:31 PM
টিকটক অ্যাপে যুক্ত তরুণ-তরুণীদের ‘পুল পার্টি’ থেকে ফেরার পথে বাসের ভেতর গাঁজা-সিগারেট সেবন আর উত্ত্যক্ত করা নিয়ে বাধে ঝগড়া; সেই ঝগড়া থেকেই ছুরি হাতে মারামারি।
ওই মারামারিতে ছুরিকাহত হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে প্রাণ হারান রাব্বী ওরফে রাফা (২৪) নামে এক তরুণ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
এ ঘটনায় হাজারীবাগ, লালবাগ, মোহাম্মদপুর ও কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ফারুক (১৯), জিতু (১৮), জসিম (১৯), মোস্তফা (১৯), জোবায়ের ওরফে যুবরাজ ওরফে জয় (১৮), মো. রাব্বি (১৯) ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর।
তাদের মধ্যে ফারুক বৃহস্পতিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন; আর পাঁচ আসামিকে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পেয়েছে পুলিশ। এ মামলায় গ্রেপ্তার আরেকজন কিশোর হওয়ায় তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার এসআই মনির হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, “হাজারীবাগ এলাকার টিকটকার শান্ত গত মঙ্গলবার ধামরাইয়ের মোহাম্মদিয়া রিসোর্টে একটি ‘পুল পার্টি’র আয়োজন করে। এই আয়োজনে হাজারীবাগ ও আশপাশের এলাকার শতাধিক তরুণ-তরুণী যোগ দেয়। তাদের এ আয়োজন ছিল মৌসুমের শেষ ‘টিকটকারস পুল পার্টি’।
“পুল পার্টি থেকে ফেরার পথে বাসের ভেতরে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে গাঁজা খাওয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বিষয়টি একজন সিনিয়রের মেয়ে বন্ধুকে ইভটিজিংয়ের দিকে গড়ায়। প্রাথমিকভাবে তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করে নিলেও উভয়পক্ষই মূলত আরো মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।”
বাসটি হাজারীবাগ যাওয়ার পথে আসাদ গেইটে এসে পৌঁছালে তরুণীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এরপর নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে। এ সময় সিনিয়র গ্রুপের রাব্বী (নিহত) নিজের কাছে থাকা ‘সুইচ গিয়ার’ (ছুরি) দিয়ে জুনিয়র গ্রুপকে আঘাত করতে যায়। জুনিয়র গ্রুপ এ সময় একত্রিত হয়ে রাব্বীর কাছ থেকে সুইচ গিয়ার কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করে।
“এ সময় শাওন (১৯) নামের অপর একজনও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাব্বীর মৃত্যু হয়। তবে আহত শাওনের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।”
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পুল পার্টি থেকে ফেরার পথে বাসে থাকা মেয়েরা গাঁজা ও সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বয়ফ্রেন্ডের কাছে অভিযোগ করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় উত্যক্তকরণ, যার পরিণতিতে এই মারামারি ও হত্যাকাণ্ড।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফারুকের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যান্য অভিযুক্তরা বয়সে তরুণ, তারা কেউ ছাত্র, কেউ কারখানার কর্মচারী।