গাফিলতিতে শিশুর মৃত্যু, এক চিকিৎসকের নিবন্ধন ৬ মাস স্থগিত

বিএমডিসির আদেশ অনুযায়ী, ডা. বি কে দাস আগামী ছয় মাস চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না; এমনকি কোথাও চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতে পারবেন না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2023, 01:18 PM
Updated : 24 June 2023, 01:18 PM

এক শিশুর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকায় কেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. বিজয় কৃষ্ণ দাসের নিবন্ধন ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।

কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন স্বাক্ষরিত গত বুধবারের অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের আশায় ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা তরুণী মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের অস্ত্রোপচারের পর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আরেকটি অভিযোগে একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সনদ স্থগিতের আদেশ এল।

ঢাকার কেয়ার হাসপাতালে ২০২১ সালে ১১ মাসের এক শিশুর মুখে আংশিক তালু কাটার অস্ত্রোপচারের পর শিশুটির মৃত্যু হয়।

চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশার তদারকি সংস্থা বিএমডিসির আদেশ অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে নিবন্ধন স্থগিত কার্যকর হবে। এতে করে নিয়ম অনুযায়ী তিনি আগামী ছয় মাস চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না; এমনকি কোথাও চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতে পারবেন না।

অভিযোগের বিষয়ে আদেশে বলা হয়েছে, “কাউন্সিল অভিযোগকারী এবং চিকিৎসক উভয়ের সাক্ষাতকার গ্রহণ ও তদন্তে চিকিৎসাকার্যে চিকিৎসকের যথেষ্ট গাফিলতি ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে।“

এতে আরও বলা হয়, ডা. বি কে দাসের (বিজয় কৃষ্ণ দাস) মাধ্যমে ১১ মাসের শিশু সন্তানের মুখে আংশিক তালু কাটার অস্ত্রোপচার করতে এসে শিশুটির মৃত্যু হয়। শিশুটির বাবা ও মা কাউন্সিলে অভিযোগ দেন।

অভিযোগ বলা হয়েছিল, ২২ অগাস্ট দুপুরে অস্ত্রোপচারের পর পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছিল আযানকে। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর থেকে আযানের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। ওই সময় ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।

আদেশে বলা হয়, “এমতাবস্থায় বিএমডিসি আইন, ২০১০ (৬১ নং আইন) এর ২৩ (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংস্থা থেকে প্রদত্ত অধ্যাপক ডা. বি কে দাসের রেজিস্ট্রেশন (অ-১৬৮৮৬, ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হল। স্থগিত আদেশ ২২ জুন ২০২৩ তারিখ থেকে কার্যকর হবে। উল্লেখিত সময়ে বিএমডিসি আইন, ২০১০ (৬১ নং আইন) এর ধারা ২২ (১) অনুযায়ী তিনি কোথাও কোনোরূপ চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না। এমনকি ওই সময়ে তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না।“

তালু কাটার অস্ত্রোপচার করতে ২০২১ সালের ২১ অগাস্ট কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল সায়েম ও মা তানজুম আক্তারের ছেলে আবদুল্লাহ আল আযানকে। প্লাস্টিক সার্জন ডা. বি কে দাসের অধীনে ২২ অগাস্ট দুপুর সোয়া ১টায় শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়। ওইদিনই রাত সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর গত ২৯ অগাস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), ঢাকার সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে বিচার চেয়ে অভিযোগ দেন শিশুটির অভিভাবকরা।

তাতে অদক্ষ লোকবল দিয়ে হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাব পরিচালনা, চিকিৎসকের গাফিলতিতে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসকের অবহেলা, নার্সের ভুল নির্দেশনা, অস্ত্রোপচারের পর কর্তব্যরত চিকিৎসকের অনুপস্থিতি এবং ডেথ সার্টিফিকেটে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগ পেয়ে ২০২১ সালের ৩১ অগাস্ট ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল হোসেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে পাঠিয়ে দেন।

বিএমডিসি ওই বছর গত ৮ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ডা. বি কে দাসকে চিঠি দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চায়। তবে তার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এর অংশ হিসেবে পরে ১৯ সেপ্টেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ওই সময় লিখিত ব্যাখ্যায় ওই চিকিৎসক অভিযোগ অস্বীকার করে শিশুটির মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

তবে নিবন্ধন স্থগিতের আদেশের পর ডা. বি কে দাসের বক্তব্য জানা যায়নি। তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

Also Read: ‘অবহেলায়’ শিশু মৃত্যুর বিচার চান বাবা-মা

Also Read: চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিকারের ব্যবস্থা কতটা কার্যকর?