সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এবং নৌপথে দক্ষিণের মানুষ বাড়ি ফিরছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
Published : 10 Apr 2024, 01:46 AM
‘স্বস্তি নিয়েই মানুষ ঘরে ফিরছে’ সংবাদমাধ্যমের এমন খবরে ‘আস্থা রেখে’ মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় বাসে ওঠেন এনজিওকর্মী শামসুল হক মৃধা। শ্যামলী থেকে রাত সাড়ে ১০টার বাস ছাড়ে এক ঘণ্টা বিলম্বে। যখন সকাল হয়, তখন পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওগামী বাসটি যেতে পেরেছে মাত্র ৪২ কিলোমিটার; মানে চন্দ্রায়। বেলা সাড়ে ১১টায় শামসুল বঙ্গবন্ধু সেতু পার হন।
সোমবার ঢাকা ও আশপাশের এলাকার পোশাক কারখানায় একযোগে ঈদের ছুটি হলে ওইদিন বিকালেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে।
উত্তরের পথে সাভার, আশুলিয়া, বাইপাইল, চন্দ্রা- এসব এলাকায় সড়কে ছিল উত্তরবঙ্গমুখী মানুষের স্রোত। আর তাতে করে সৃষ্টি হয় দুঃসহ যানজটের; ঈদ যাত্রার শুরুতে সড়ক ও রেলে যে স্বস্তি ছিল, শেষ বেলার চাপে তা পরিণত হয় দুর্ভোগে। তবে নৌযাত্রায় চাপ বাড়লেও তেমন ভোগান্তি ছিল না।
শামসুল হক মৃধা বলছিলেন, “খবরে দেখলাম রাস্তায় স্বস্তি। আবার সরকারের কর্তারাও বলছিলেন, এবারে যানজট হবেই না। সে কারণে কাজকর্ম সেরে সোমবার রাতে বুড়িমারী এক্সপ্রেস নামে একটি পরিবহনের স্লিপার বাসে টিকেট কাটি। বাস সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ল এক ঘণ্টা দেরিতে।
“এসব বাসের ভেতরে আলাদা আলাদা খোপের মতো বিছানায় শুয়ে শুয়ে যাত্রা করতে হয়। সেই বাস ঢাকা ছাড়তেই অনেক সময় নিল। সকালে যখন চোখ মেললাম, তখনো চন্দ্রা পার হইনি।”
একটি এনজিওর মাওয়া কার্যালয়ে কর্মরত শামসুল বলেন, “রাস্তা ভালো হয়েছে, চওড়া হয়েছে। সেতুগুলো হয়েছে। সব মিলিয়ে চমৎকার সব স্থাপনা হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা এখনো সেই মাত্রার হয়ে ওঠেনি, যার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের।”
পুলিশ বলছে, তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার পোশাক শ্রমিকদের একযোগে ছুটি হওয়ায় সড়কে চাপ পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল মুখার্জী মঙ্গলবার বিকালে ছিলেন চন্দ্রা এলাকায়।
সেখান থেকে মোবাইল ফোনে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পোশাক কারখানায় ছুটি দেওয়ায় বাড়তি মানুষের চাপ পড়ে রাস্তায়। সে কারণে যানজট হলেও এখন সেটা কমেছে।
“স্বাভাবিকের চেয়ে রাস্তায় যানবাহন বেশি থাকায় চাপ একটু বেশি। তবে হাইওয়ে পুলিশ মাঠে আছে। আমরা কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠা-নামা করতে দিচ্ছি না। আর কাউন্টার যেখানে-সেখানে পৃথক লেইন করে দেওয়া হয়েছে। পাশের লেনগুলোতে অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে। গাড়িগুলো উত্তরের পথে যাচ্ছে।”
পুলিশ কর্মকর্তা শ্যামল বলেন, “আমরা মাঠেই আছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি, মানুষ যাতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে পারে। আশা করছি সবাই প্রিয়জনের সান্নিধ্যেই ঈদের দিন কাটাবেন।”
যানবাহনের বাড়তি চাপে মঙ্গলবার সকাল থেকে টাঙ্গাইল সদরের ঘারিন্দা বাইপাস থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। চার লেইনের মহাসড়ক থেকে গাড়ি এলেঙ্গায় পৌঁছালে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এলেঙ্গা থেকে সেতুপূর্ব পর্যন্ত দুই লেইনের সড়ক হওয়ায় এই দশা বলে জানাচ্ছেন চালকরা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মীর সাজেদুর রহমান বলেন, সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে পরিবহনের খুবই চাপ বেড়েছে।
“ভোরে যমুনা সেতুর উপর একটি ডাবল ডেকার বাস বিকল হয়ে যাওয়ায় সেটি উদ্ধারের জন্য পাঁচ মিনিট টোল আদায় বন্ধ ছিল। এ সময় মহাসড়কে গাড়ির চাপ আরও বেড়ে যায়।”
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালে বেশ কয়েকটি জায়গায় চলন্ত বাস বিকল হয়েছে। অনেক গাড়ির চাকা ফেটে মাঝ সড়কে পড়ে আছে। আর এতেই বিকল হওয়া গাড়ির পেছনে লেগে যায় যানজট। ধীরে ধীরে এই জট দীর্ঘ হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ৪২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব অংশে ২৭ হাজার ২৩২টি যানবাহন পারাপার হয়; সেখানে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৯৫০ টাকা। আর সেতুর পশ্চিম অংশে ১৬ হাজার ১৯৫টি যানবাহন পারাপার হয়; টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা।
গাজীপুর মহানগর ও হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা, জৈনাবাজার ও গাজীপুর মহাগরের চান্দনা-চৌরাস্তা স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, বোর্ড বাজার, সাইনবোর্ড এলাকায় সোমবার দুপুর থেকে গভীর রাত ৪টা পর্যন্ত যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ ছিল।
এরপর তা কমে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের চাপ ১১টা থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী আরিফুর রহমান জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে নেত্রকোণা যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৭টায় নেত্রকোণা পৌঁছেছেন।
সাধারণ সময়ে এ পথ পাড়ি দিতে সাড়ে ৩ ঘণ্টার মতো সময় লাগে বলে জানান তিনি।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি শাহাদত হোসেন বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সোমবার দুপুর থেকে রাতভর যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও মঙ্গলবার সকালে কিছুটা কমতে শুরু করে।”
তবে মঙ্গলবার সকালে গাবতলী অনেকটা ফাঁকাই ছিল। যদিও মঙ্গলবার সন্ধ্যা কোনো টিকেটই নেই বলে জানান হানিফ এন্টারপ্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টারের কর্মী পাভেল।
পদ্মা সেতুতে বাইকের লম্বা লাইন
ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতুতে। সেতুর টোল প্লাজায় সাতটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করেও যানবাহনের চাপ আটকানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের লেনে দীর্ঘ লাইন থাকছে।
মঙ্গলবার ভোর থেকেই পদ্মা সেতু এলাকায় অন্যান্য গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেলের ঢল নামে। বাইকের চাপ এতই বেড়ে যায় যে তার লাইন ছড়ায় মাওয়া টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটারে। অবশ্য বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের চাপ কিছুটা কমে আসে।
সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “টোল প্লাজার মোটরসাইকেল বুথ ছাড়াও সাতটি বুথে টোল নিয়েও হিমশিম খেতে হয়। সকালে বেশি চাপের কারণে মোটরসাইকেলের বুথ বাড়িয়ে দুটি করা হয়েছিল।
“তবে বেলা বাড়ার পর অন্য যান সামাল দিতে বাইকের বুথ আবার একটিতে নামিয়ে আনা হয়।”
ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে ঈদযাত্রায় স্বস্তি
আশঙ্কা থাকলেও কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে স্বস্তির সঙ্গে বাড়ি ফিরছে মানুষ। অন্যান্যবারের মত এখনও এ পথে বড় ধরনের কোনো যানজট তৈরি হয়নি।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো যানজট নেই। হাসিমুখে ভোগান্তি ছাড়াই ঘরমুখো হচ্ছেন মানুষজন।
মঙ্গলবারও যানজট না দেখা যায়নি, তবে রাজধানীর ভেতরের সড়কগুলোতে যানজট থাকায় নির্ধারিত সময়ে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার কাউন্টারে বাস আসেনি বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ শরফুদ্দিন বলেন, “অন্যান্যবারের তুলনায় মহাসড়কে অতিরিক্ত কোনো চাপ নেই। তাছাড়া, ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরাও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন আছে।
“কিছু পরিবহন কাউন্টারের সামনে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছে। কিন্তু তাদের অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী তুলে সড়ক ছেড়ে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে যাত্রী পরিবহনে শৃঙ্খলায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করবে পুলিশ”
শেষবেলায় রেলে বিশৃঙ্খলা
এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিল রেলওয়ে। কমলাপুরে ভিড় এড়াতে উত্তরবঙ্গের দুটি ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩ এপ্রিল থেকেই টিকেট ছাড়া কেউ যাতে স্টেশনে ঢুকতে না পারে, সেজন্য কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের প্রবেশ ব্যবস্থা করা হয়।
রেলওয়ের টিটিই, রেলপুলিশ, আনসার, রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করেন স্কাউট সদস্যরা। তারা টিকেট ছাড়া যাত্রীদের স্টেশনে আসতে দিচ্ছিলেন না। পাশাপাশি ট্রেনের ছাদে চড়াও বন্ধ ছিল।
তবে সোমবার বাড়ির ফেরার মানুষের ঢল নামলে কমলাপুরের সেই চিত্র পাল্টে যায়। ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে যে যেভাবে পারে, চড়ে বসেন। আর তাতে ভোগান্তিতে পড়েন টিকেট কেটে ওঠা যাত্রীরা।
সোমবার রাত পৌনে ১১টায় বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে ট্রেনে ওঠেন সুমনা রহমান নামের এক নারী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রেনে ভিড় থাকায় উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। উঠেও নিজের সিটে যেতে পারেননি তিনি।
“আমাদের সিট ছিলো ‘ট’ বগিতে। ট্রেন আসার পর বগির দুটি দরজাই বন্ধ। অনেক অনুরোধ করার পরও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না যাত্রীরা। পরে অনেক ধাক্কা, দরজায় লাথি দিলে রেলের গার্ড, পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা আসেন। অনেক তর্কাতর্কির পর তারা একটি দরজা খুলে দিলে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারি।"
সুমনা রহমান বলেন, ট্রেনে উঠেও ভিড়ের কারণে তাদের নির্ধারিত সিটে যেতে পারেননি তারা।
“ভিতরে এত মানুষ যে দরজার সামনে থেকে কোনোভাবেই আমার সিট পর্যন্ত যেতে পারিনি। প্রচণ্ড গরম, এত মানুষের শরীরের তাপ… মনে হচ্ছিল আমি হিট স্ট্রোক করব। যাই হোক প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়েছিলাম। ট্রেন যমুনা সেতু পার হওয়ার পর কিছুটা ফাঁকা হলে আমার সিট পাই।”
মঙ্গলবার সকালেও কমলাপুর গিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি ট্রেনে ভিড় দেখা গেছে। অনেক যাত্রীই তাদের নির্ধারিত আসতে বসতে পারেননি স্ট্যান্ডিং যাত্রীদের কারণে।
পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, “ঢোকার সময় প্রত্যেকের টিকেট চেক করে। আবার স্ট্যান্ডিং টিকেটও দেয়। ফলে ভিড় বাড়ে ট্রেনে।
“স্টেশনে ঢোকার সময় নিরাপত্তার ব্যাপক কড়াকড়ি দেখলাম। টিকেটবিহীন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। তাহলে এত মানুষ কোথা থেকে আসল? ছাদে, টয়লেটে কোথাও ফাঁকা নেই। এই প্রচণ্ড গরমে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপায়।”
ট্রেনে শেষ মুহূর্তে এসে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণ জানতে চাইলে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তৈরি পোশাক কারখানা ছুটির পর সোমবার থেকে ভিড় বেড়ে গেছে। এর আগে যাত্রীরা নির্বিঘ্নেই গেছেন।
“গার্মেন্টস ছুটির পর চাপ বাড়ায় কয়েকটি ট্রেনে যাত্রীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ছাদে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেছেন কেউ যেন ছাদে উঠতে না পারেন। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে পেরে ওঠেননি।”
নৌযাত্রায় স্বস্তি
ঈদের আগ মুহূর্তে বাস ও ট্রেনে যাত্রীদের অসহনীয় ভিড় ও যানজটে ভুগতে হলেও অনেকটা স্বস্তির যাত্রা হচ্ছে লঞ্চে। আগের তুলনায় এখন যাত্রী কম। লঞ্চ কর্মীরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পরে লঞ্চের যাত্রী কমেছে অনেকাংশে।
ঈদের ছুটি কাটাতে পটুয়াখালীর গলাচিপা যাবেন সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, “এবার কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। আগে তো ঠেলাঠেলি করে লঞ্চে ওঠা লাগত। এবার কিছুটা স্বস্তি আছে। আর ভাড়াও বাসের তুলনায় বেশি না।”
পটুয়াখালীগামী এ আর খান-১ লঞ্চের সুপারভাইজার আলাউদ্দিন বলেন, “আজ সকালে পটুয়াখালী থেকে আসছি। ৫০ হাজার টাকা লস খাইসি আসতে গিয়া। কারণ একেবারে খালি আসছি।
“এখন যাওয়ার সময় যাত্রী হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ যাত্রী। কিন্তু দুই-তিন বছর আগে আমাদের ৩ হাজারের মত যাত্রী নিয়েছি ঈদ মৌসুমে।”
বরিশালগামী শুভরাজ-৯ লঞ্চের টিকেট বিক্রেতা সজল বলেন, গত ঈদগুলোর তুলনায় এবার যাত্রী বেশ কম। তবে দুই-তিনদিন আগের তুলনায় এখন যাত্রী বেড়েছে।
“আমাদের কেবিন ভাড়া ১২০০ টাকা, আর ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা করে।”
সদরঘাটের ১ নম্বর গেইটে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন ফল নিয়ে বসেন সুমন হাওলাদার। জানান, ঘরমুখো মানুষ লঞ্চে ওঠার আগে পরিবারের জন্য ফলফলাদি কেনায় তার বিক্রি বেড়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম খান বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়ার আগে আমাদের সুদিন ছিল। সেতু হওয়ার পর থেকে যাত্রী বেশিরভাগ সড়কপথে যাতায়াত করে। তবে সড়ক পথে এত বেশি যাত্রী নেওয়ার সক্ষমতা নেই, বিধায় আমাদের লঞ্চেও যাত্রী অনেক রয়েছে।
“কিন্তু সেটা অন্য ঈদের তুলনায় খুবই কম। আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল।”
সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, “ঈদের জন্য এখন যাত্রী বেড়েছে, তবে তা দুইবছর আগের ঈদের তুলনায় অনেক কম। যাত্রী কম হওয়ায় শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছে।”