এমএফএসে মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার হুন্ডি: সিআইডি

সিআইডি প্রধান বলছেন, এমএফএসের ২ হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে হুন্ডি হচ্ছে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 12:01 PM
Updated : 22 Nov 2022, 12:01 PM

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

সোমবার রাতে ঢাকা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মীর মো. কামরুল হাসান শিশির (২৮), খোরশেদ আলম (৩৪), মো. ইব্রাহিম খলিল (৩৪), কাজী শাহ নেওয়াজ (৪৬), মো. আজিজুল হক তালুকদার (৪২) ও মো. নিজাম উদ্দিন (৩৫)।

তারা হুন্ডির মাধ্যমে ‘কোটি কোটি টাকা’ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত জানিয়ে মোহাম্মদ আলী মালিবাগে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেনের একাধিক চক্র রয়েছে। এমএফএসের ২ হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

“গ্রেপ্তাররা হুন্ডি ব্যবসা করে এবং অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার ও বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে অর্থ পাচার করে আসছে।”

চক্রগুলো তিনটি গ্রুপে কাজ করে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, “প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদেরকে দেয়।

“দ্বিতীয় গ্রুপে পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশিয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে প্রদান করে। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএসের এজেন্ট বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএসের নম্বরে দেশিয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।”

সিআইডি প্রধান বলেন, “গ্রেপ্তার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ ‘জে এ এন্টারপ্রাইজের’ ২ হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশকিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত।”

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডি প্রধান বলেন, “ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম এর মতো একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় টাকাগুলো সরাসরি পাঠাতেন। চক্রের সদস্যরা বিদেশে সম্পদ অর্জনসহ অনলাইনে জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মূদ্রা কেনাবেচা, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছেন।”

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সকল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় অনেক ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ আছে। এই ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের মালিকদের উচিৎ অধিনস্ত যেসব এজেন্ট আছে তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা। যদি মনিটরিং না করে তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবে।”

প্রবাসীদের বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিকাশের হেড অফ কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। অস্বাভাবিক লেনদেন দেখলেই ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে জানানো হয়।

“আমি বলব, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জানি না এখানে আমাদের দেওয়া তথ্যে কাউকে ধরা হয়েছে কি না... অর্থাৎ, আমাদের দেওয়া তথ্যে অনেককেই ধরা হয়। বিকাশ তার এজেন্টদের শতভাগ মনিটর করে।”

আরও খবর

Also Read: এমএফএসে ‘হুন্ডি’: ৪৮০ এজেন্টের হিসাব স্থগিত