সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২৮ অগাস্ট নতুন দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
Published : 06 Jul 2023, 03:55 PM
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আবারও পিছিয়েছে।
আসামি পক্ষের আবেদনে বৃহস্পতিবার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল আলম আগামী ২৮ অগাস্ট নতুন তারিখ রেখেছেন।
অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানিতে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা দেন সম্রাট। তার আইনজীবী শুনানি পেছানোর পাশাপাশি সম্রাটের স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। পরে বিচারক নতুন ধার্য তারিখে শুনানি ও সেইসময় পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন।
কতবার এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল সাংবাদিকদের তা জানাতে পারেননি সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা এখনও অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাইনি। তাছাড়া গত ১ জুন সম্রাটকে দুই মাসের জন্য পাসপোর্ট নিজ জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এছাড়া চিকিৎসা করাতে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেন।
“আমরা গত ২০ জুন আদালতে একটি দরখাস্ত দিয়েছিলাম সম্রাটের বিদেশ যাওয়ার অনুমতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে অবগত করার জন্য। এরপর গত ২২ জুন সম্রাট চিকিৎসার উদ্দেশে সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য অ্যাম্বাসিতে তার পাসপোর্ট জমা দেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্লিয়ারেন্স পাননি তিনি।”
সমাজী বলেন, “আজ আমরা আদালতে এসব বিষয় উপস্থাপন করলে আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন মুলতবি করে আগামী ২৮ অগাস্ট দিন ধার্য করেছেন।”
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
এরপর ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
গত বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে চার মামলায় জামিন পান সম্রাট। কারাগারে যাওয়ার ৩১ মাস পর তার মুক্তি মেলে।
আরও পড়ুন-