চলতি সংসদে আর কোনো অধিবেশন না থাকায় নির্বাচনের পর নতুন সংসদ বসলে ভুল সংশোধন করে আবার বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
Published : 06 Dec 2023, 07:58 PM
সংসদে পাস হওয়া বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল ২০২৩ মুদ্রণজনিত ভুলের কারণে রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে ফেরত এসেছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, চলতি সংসদে আর কোনো অধিবেশন না থাকায় নির্বাচনের পর নতুন সংসদ বসলে ভুল সংশোধন করে আবার বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
সংশোধিত শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোরও আপত্তি ছিল। শ্রমিকদের সুরক্ষায় আরও কিছু উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও পর্যবেক্ষণ ছিল।
এসবের মধ্যে সংসদে শ্রম আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, প্রয়োজন হলে আরও সংশোধনী আনা হবে।
কিন্তু গত নভেম্বরে সংশোধিত শ্রম বিলে স্বাক্ষর না করে ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ‘সংসদে গৃহীত বিল পুনর্বিচেনার জন্যে রাষ্ট্রপতির বার্তা’য় বলা হয়েছে- “এই বিলের দফা-৪৫ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। কাজেই এই দফা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।”
২০০৬ সালের শ্রম আইনে দুটি উপধারায় বেআইনি শ্রমিক ধর্মঘট এবং মালিকপক্ষের বেআইনি লকআউটের ক্ষেত্রে যে শাস্তি ছিল, তার কিছুটা সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়। ওই আইনে কোনো শ্রমিক কোনো বেআইনি ধর্মঘট করলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। কোনো মালিকও কোনো বেআইনি লকআউট করলে ঠিক একই শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলে আইনি বিধান করা হয়।
এবার আইনটির যে সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে, সেখানে শ্রমিকদের বেআইনি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে জরিমানা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু মালিকদের ক্ষেত্রে জরিমানা আগের মতই ৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেই বিলটি ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি।
বিভ্রান্তির শঙ্কায় শ্রম বিল ফেরত পাঠালেন রাষ্ট্রপতি
শ্রম আইন সংশোধনীর প্রশ্নে যা বলছেন শ্রমিক নেতারা
মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ট্রেড ইউনিয়ন করার সুবিধা বাড়িয়ে শ্রম বিল পাস
বুধবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “শ্রম আইনটা যখন সংসদে পাস হয় তখন একটা ত্রুটি ছিল। দেখা গেছে, এটা অন্য কোনো ত্রুটি না, এটা টাইপিং ত্রুটি। একজায়গায় শ্রমিকদের সাথে যদি মালিকরা বেআইনি আচরণ করেন, তাহলে তাদের জন্য একটি সাজার কথা আইনের মধ্যে আছে। সেটা একটু মিসপ্লেস হয়ে গিয়েছিল। যেটা ২৯৪-এর ১ ধারা হওয়ার কথা ছিল, সেটা সেরকম না হয়ে, অন্যরকম হয়েছে।
“অনেকগুলো বিল খুব তাড়াতাড়ি পাস হয়েছিল গত সংসদে। সে কারণে এ ভুলটা পরে ধরা পড়েছে। জিনিসটা রাষ্ট্রপতির কাছে সইয়ের জন্য গেছে, তখন এটা যেহেতু পরিলক্ষিত হয়েছে যে শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়ে যেতে পারে, সে জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ভুলের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সই না করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়ে দিয়েছেন।”
মন্ত্রী বলেন, যেহেতু এটি সংসদে পাস হয়ে গেছে এবং ওই জায়গাটুকু সংশোধন করতে হবে। সেই সংশোধনের জন্য আইনটি আবার সংসদে তুলতে হবে।
“যেহেতু এখন তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে এবং বর্তমান সংসদের আর অধিবেশন হবে না, সেহেতু নির্বাচনের পর যে নতুন সংসদ বসবে, সেখানে এটা উপস্থাপন করা হবে এবং ভুল সংশোধন করে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করা হবে।”
আনিসুল হক বলেন, “সরকার যখন দেখতে পেল যে শ্রমিকদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তাতে কিছু ত্রুটি হয়ে গেছে এবং সেটা শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করবে, এ জন্য সরকার এটা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার আইনি বিচারে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন এটা আবার সংসদে উপস্থাপন করা হবে।”
আইনটি কী দ্বাদশ সংসদে আবার উঠবে, নাকি মন্ত্রিসভায় পুনর্বিবেচনা করা হবে, এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “যে ত্রুটিটা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের সময় সেটা সঠিক ছিল, ভুলটা পরে হয়েছে। যে কারণে এটি মন্ত্রিসভায় যাওয়ার দরকার পড়বে না। নতুন সংসদে সংশোধনী হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, ওই বিলে বলা হচ্ছে, কোনো মালিক বেআইনি লকআউট শুরু করলে কিংবা চালিয়ে গেলে, অথবা তা এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো কাজ করলে তিনি ছয়মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
“এই সাজাটা ছিল পাঁচ হাজার টাকা, কিন্তু এটা ২০ হাজার টাকা করেছি। এখানেই ত্রুটিটা হয়ে গেছে। এই ত্রুটি যখন শ্রম মন্ত্রণালয় ধরতে পেরেছে, তখন এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি এটিকে ফেরত দিয়েছেন।”