কেউ কেউ বিনামূল্যেও দিয়ে দিচ্ছেন। আবহাওয়া খারাপ, রোদ নেই। দোকানে বেশি দিন রাখলে দুর্গন্ধ ছড়াবে- এ কারণে দ্রুত সরিয়ে ফেলছেন ব্যবসায়ীরা।
Published : 02 Jul 2023, 09:59 PM
আগের দিনের প্রবল বর্ষণে দোকানে পানি ঢুকে ভিজে যাওয়া শত শত বস্তা চাল পানির দরে বেচছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
রোববার এ চালের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ছয় হাজার টাকার ৫০ কেজি সুগন্ধি চালের বস্তা ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগের দিন বুধবার ঢাকায় বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন এবং পরদিনও বৃষ্টি হয়েছে বেশ। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এ কয়দিনের বৃষ্টিই কাল হয়ে দাঁড়ায় ঢাকার অন্যতম এ চালের বাজারের।
ঈদের দিন থেকে কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকানগুলো ছিল বন্ধ। এর মধ্যে শনিবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিতে পানি জমে গেলে দোকানে দোকানে পানি ঢুকতে শুরু করে। ছুটির মধ্যে দোকান বন্ধ থাকায় কর্মীরাও ছিলেন না; ফলে সঙ্গে সঙ্গে পানি থেকে চাল রক্ষা করা যায়নি। ঢাকার বাইরে থাকা অনেক মালিক আড়তে আসতে পারেননি।
রোববার যারা এসেছেন, তারা দোকানে দ্রুত ভেজা ও শুকনা বস্তা আলাদা করার চেষ্টা করেছেন। এ ভেজা বস্তা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন বা বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছেন।
কম দামে চাল বিক্রির খবর পেয়ে এ দিন দুপুরের পর থেকে কৃষি মার্কেটে ভিড় করতে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে, যাদের বেশির ভাগই দিনমজুর।
‘ফাহমিদা রাইস’র মালিক জসিম উদ্দিন বিকালে জানান, তার দোকানের কী পরিমাণ চাল নষ্ট হয়েছে তা তখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
“উপরের বস্তাগুলো সরিয়ে নিচের দিকে আসতে সময় লাগছে। সারাদিনে ভেজা পোলাওয়ের ৫০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো একবারে নষ্ট হয়ে গেছে।
“এসব বস্তার কোনোটি ৩০০ টাকায়, কোনোটি ৪০০ টাকায় বিক্রি করে
দিচ্ছি। অথচ ৫০ কেজির এসব বস্তা আমরা ছয় হাজার চারশ টাকায় বিক্রি করে থাকি।”
অন্যদিকে মিনিকেট ও নাজিশাইল চালের ৫০ কেজির বস্তা সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হলেও সেসব চাল ভিজে যাওয়ায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
দোকানের ভেতরের দিকে আরও দেড় শতাধিক বস্তা রয়েছে, যেগুলো পানিতে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা জানিয়ে জসিম বলেন, “উপরের বস্তাগুলো সরিয়ে নিচে আসতে যা সময় লাগবে, ততক্ষণে এসব চাল থেকে দুর্গন্ধ বের হবে। পানির দরের ক্রেতাও পাওয়া যাবে না। ঈদের ছুটির কারণে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।”
জসিমের মতো মার্কেটটির আরও অনেক ব্যবসায়ী নামমাত্র মূল্যে চাল বেচছেন। এ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মন্টুর ‘বরিশাল রাইস’ নামে একটি দোকান রয়েছে। তার দোকানেও পানি ঢুকে প্রায় ১০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্টু জানান, ৫০ কেজি ওজনের এসব চালের বস্তা তার এলাকার পরিচিত গরিব মানুষকে ডেকে বিনামূল্যে দিয়েছেন।
“আবহাওয়া খারাপ, রোদ নেই। দোকানে বেশি দিন রাখলেই দুর্গন্ধ ছড়াবে- এ কারণে দ্রুত সরিয়ে ফেলেছি।”
ব্যবসায়ীদের এই নেতা জানান, মার্কেটের ১৭০টি দোকানের মধ্যে প্রায় ১০০ দোকানের অনেকটা পানির নিচে তলিয়ে যায়, যার ফলে নষ্ট হয়েছে লাখ লাখ টাকার চাল।
বাদশা মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। কর্মচারীরাও গ্রামের বাড়ি গেছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুই করতে পারছেন না তিনি।
কম দামে চাল বিক্রির খবর পেয়ে ঢাকা উদ্যান থেকে ছুটে আসেন গৃহকর্মী সাবিহা খাতুন। তার স্বামী রিকশা চালান।
সাবিহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি দুই বস্তা পোলাও চাল কিনেছেন ৫৫০ টাকায়।
“লস নাই। শুকিয়ে আবার বস্তায় ভরে রাখব। পরে বিক্রিও করব।”
এই বৃষ্টির দিনে চাল কীভাবে শুকাবেন- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “ফ্যান আছে।”
মার্কেটটির ব্যবসায়ীদের দাবি, পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় পানি জমে তাদের লাখ লাখ টাকার চাল নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ পানি নিষ্কাশনের জন্য সমিতিকে তারা সম্প্রতি টাকা দিয়েছেন।
ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মন্টুর ভাষ্য, তারা টাকা নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঈদ চলে আসায় কাজ করতে পারেননি। তাছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে এ ব্যাপারে বারবার বলা হলেও তারা এড়িয়ে গেছেন।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পানি ঢুকে ‘লাখ লাখ টাকার’ চাল ডাল নষ্ট