এদিন বই বিক্রিও হাসি ফুটিয়েছে প্রকাশকদের মুখে।
Published : 14 Feb 2023, 10:57 PM
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে উৎসবের যে রঙ ছড়িয়েছে শহরে, তার ঢেউ যেন আছড়ে পড়ল অমর একুশে বইমেলায়।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় মেলার প্রবেশ দ্বার খুলে দেওয়ার পর লোক সমাগম অন্যান্য দিনের মতো থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর বইমেলা রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
বাসন্তি রং শাড়িতে মেলায় মেয়েদের ভিড় যেমন ছিল, হলুদ ও লাল রংয়ের পাঞ্জাবিতেও ছেলেদের সাজও ছিল নজরকাড়া। এদিন বই বিক্রিও হাসি ফুটিয়েছে প্রকাশকদের মুখে।
ব্যাংকার সাঈদ আহমেদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। মেয়েকে কিনে দিয়েছেন পছন্দের বই।
সাঈদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে থেকেই মেয়ের বায়না ছিল বসন্তের দিনে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকের চাকরি করি, কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। বসন্তের দিন বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বইমেলায় এসেছি।”
সন্ধ্যায় বইমেলায় তাম্রলিপির স্টলের সামনে দেখা যায় দাঁড়ানোর জায়গা নেই। প্রকাশনীটির কর্মীরা ভিড়ের ফাঁকেই জানালেন, লোকজন আসছে এবং বইও কিনছেন। বিক্রি সন্তোষজনক।
আগামি প্রকাশনীর মালিক ওসমান গণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরই বইমেলায় প্রকাশকরা অপেক্ষা করেন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং ছুটির দিনগুলোর দিকে। এবার আমাদের প্যাভিলিয়নে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে মেলা আরও জমজমাট হবে।”
নালন্দার প্যাভিলয়নে এদিন আলোচনায় ছিল জান্নাতুল নাইম প্রীতির ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’ বইটি। বইমেলার টাস্কফোর্স এদিন বিকালে বইটির বিক্রি ও প্রদর্শনে মৌখিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মেলার শুরু থেকে বইটি বিক্রি হলেও মঙ্গলবার বিকাল থেকে আর বিক্রি করা হয়নি।
নালন্দার বিক্রয়কর্মী সিয়াম আহমেদ বলেন, “বইটির খোঁজে অনেকেই এসেছেন। কিন্তু আমরা আর বিক্রি করিনি। তবে মেলার বাইরে অনলাইন বুক শপে এবং নালন্দার বাংলাবাজার কাউন্টারে বইটি পাওয়া যাবে।”
মেলায় লোক সমাগম বাড়লে অব্যস্থাপনাও যেন বেড়ে যায়। মঙ্গলবার মেলায় টিএসসি গেটের সরু প্রবেশ পথ দিয়ে যেতে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েন। সন্ধ্যায় যারা মেলায় এসেছেন তাদের দাঁড়াতে হয়েছে দীর্ঘ ‘চেক ইন’ লাইনে।
মঙ্গলবার ছিল বইমেলার চতুর্দশ দিন। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৩টি।
অনুষ্ঠান
বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন সম্পদ বড়ুয়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর ও মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফকরুল আলম।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন হাসান মাহমুদ, আফতাব হোসেন, মিনার মনসুর ও আইরীন নিয়াজী মান্না।
সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ঝর্না রহমান, হাসান হাফিজ, হাসনাত লোকমান, মোশাররফ শরীফ, মাসুদ পথিক ও শারমীন জাহান মিতু। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আওরঙ্গজেব আরু, শিমুল পারভীন ও পারভেজ চৌধুরী। এছাড়া ছিল সৈয়দ শরিফুল আলম শফু-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মাতৃভূমি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন খুরশিদ আলম, মুর্শিদুদ্দীন আহম্মদ, নবীন কিশোর, সঞ্জয় কুমার দাস, আঞ্জুমান আরা শিমুল, চম্পা বণিক। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন নন্দ দুলাল বড়–য়া (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), অমিত দাস (গিটার) এবং মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।
বুধবার যা থাকবে
বুধবার বইমেলার পঞ্চদশ দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম ও সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাজ্জাদ আরেফিন।