Published : 24 Dec 2023, 07:17 PM
বিএনপির হরতাল-অবরোধের মধ্যে যানবাহনে নাশকতার ঘটনায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা যে ‘মহাপাপ ও অন্যায়’ সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, “এই অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। কোনো ধর্মগুরু এটা মেনে নিতে পারেন না। মানবতার জন্য যিশু খ্রিষ্ট তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।"
বাসস জানিয়েছে, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে রোববার গণভবনে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, “মানবতা ও মানবজাতির কল্যাণই সব ধর্মের মূল কথা। আমরা সেই বিশ্বাস থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।”
যারা ‘আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ’ দেয় এবং যারা সেই নির্দেশ পালন করে, তাদের কঠোর সমালোচনা করেন সরকারপ্রধান।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিনে সংঘর্ষের পর থেকে ডাকা হরতাল-অবরোধে সারা দেশে ২৮৫ যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
এর মধ্যে রেলে পাঁচটি বড় ধরনের নাশকতা দেখেছে বাংলাদেশ। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের, রেলের কর্মীসহ আহত হয়েছে অনেকে। পুরোপুরি পুড়ে গেছে রেলের সাতটি কোচ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও আটটি কোচ এবং একটি ইঞ্জিন। এছাড়া লাইনে আগুন দেওয়া, ফিসপ্লেট তুলে ফেলা, ককটেল বিস্ফোরণের বেশকিছু ঘটনার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে।
সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ভোরে। সেদিন নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় আসার পথে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয় বিমানবন্দর স্টেশনের পরে। এতে প্রাণ হারান মা-শিশুসহ চার জন।
সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক মা তার ছোট সন্তানকে বাঁচাতে বুকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন, সেভাবেই পুড়ে মারা গেছেন। আমরা এই ধরনের দৃশ্য দেখতে চাই না।”
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, বাস-ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দিয়ে লাভটা কী হবে?
“মানুষ হত্যা, রেললাইনের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করে তারা কী অর্জন করেছে? এটা কী ধরনের রাজনীতি, আমি জানি না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মাটিতে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নির্বাচন বানচাল করে কাউকে লাভবান হতে দেওয়া হবে না।”
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মানবতা প্রচারের মহৎ উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গকারী যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থানে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখনই আমি সুযোগ পাচ্ছি, বারবার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এ অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছে।”
বড়দিন উপলক্ষে দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী । এ সময় তার একমাত্র বোন শেখ রেহানাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, আর্চবিশপ বেজয় নাইসেফরাস ডি'ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জুয়েল আরং এমপি, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, ধর্ম মন্ত্রণলায়ের সচিব এ হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান লীগের সভাপতি ড্যানিয়েল নির্মল ডি কস্তা ও বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোরায়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।
ঢাকার আর্চবিশপ আর্চডায়োসিস বেজয় নাইসেফরাস ডি'ক্রুজ এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বড়দিনের শুভেচ্ছা কার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা বড়দিনের ক্যারল এবং অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।