মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার জীবনানন্দ যোগ

এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’; প্রথমবারের মতো কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙতি ব্যবহার করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 04:19 PM
Updated : 21 March 2024, 04:19 PM

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙতি থেকে এবারই প্রথম প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার। ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলা ১৪৩১ সালকে বরণের প্রস্তুতি।

বরাবরের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করবে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার, যেটিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে শুরু হবে পহেলা বৈশাখ ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের।

বৃহস্পতিবার ছবি এঁকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং চিত্রশিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর মধ্য দিয়ে বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হওয়া পহেলা বৈশাখের প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞ শুরু হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে, যা চলবে চৈত্রসংক্রান্তি পর্যন্ত।

জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “আমরা এযাবৎ মঙ্গল শোভাযাত্রায় যত প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি, তা সবই বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের লেখা থেকে নেওয়া। তবে এবার খেয়াল করলাম যে আমাদের সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি জীবনানন্দের কোনও পঙক্তি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি।

“তাই এবার কবির ‘তিমির হননের গান’ কবিতার একটি লাইন আমরা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি। এটি তরুণ প্রজন্মের মুখে উচ্চারিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘আমরা তো তিমির বিনাশী'।“

অধ্যাপক নিসার বলেন, “এবার যে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে, সেই প্রতিপাদ্য অনুযায়ী এখন বিভিন্ন মোটিফ তৈরি করা হবে। কী কী মোটিফ হবে, তা এখনও আমরা চূড়ান্ত করিনি। তবে আশা করছি তিনটি বড় মোটিফ এবং কিছু ছোট মোটিফ থাকবে।“

এছাড়া শতাধিক মুখোশ বা অন্যান্য শিল্পকর্মও থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনা করে মোটিফগুলো চূড়ান্ত করা হবে। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।

গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি।

এবারের কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর এমিরিটাস অধ্যাপক হাশেম খান সাংবাদিকদের বলেন, “অশুভ শক্তি এখনও নানাভাবে আমাদের এগিয়ে চলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। তরুণদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।”

পাকিস্তান আমলে বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তার প্রতিবাদে বাংলা বর্ষবরণ শক্তি যুগিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ষাটের দশকে বাঙালি সংস্কৃতির উপর নানা রকম ষড়যন্ত্র রুখে দিতেই নব উদ্যমে বর্ষবরণ শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গল শোভাযাত্রাও শুরু হয়। অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করা হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়।

কোনো রক্তচক্ষুই বাঙালি সংস্কৃতির বিনাশ করতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি। এজন্য তরুণদের বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার ঈদের পরপরই বর্ষবরণ। এজন্য প্রস্তুতির সময় কিছুটা কম মিলবে। তবে উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ হচ্ছে।

সাধারণত চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। সে অনুযায়ী এবার অনুষদের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতির মূল দায়িত্বে থাকছেন। তারা শোভাযাত্রার বিভিন্ন মোটিফ ও শিল্পকর্ম তৈরি করছেন।

প্রস্তুতির বিষয়ে ডিন বলেন, সাধারণত এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। এবার প্রস্তুতি শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। শেষের দিকে ঈদের ছুটিতে প্রস্তুতিতে খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না। তবুও চিন্তার কিছু নেই।

ঈদের ছুটি মঙ্গল শোভাযাত্রায় লোক সমাগমের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? এমন প্রশ্নে নিসার হোসেন বলেন, “এবার ঈদের পরপরই বর্ষবরণ হওয়ায় আমি মনে করি, আমাদের উৎসবের আনন্দ বেড়ে যাবে। সারা দেশেই এবার মহাসমারোহে বর্ষবরণ হবে। ঢাকায় যারা আছেন, তারাও মঙ্গল শোভাযাত্রায় আসবেন এবং ঈদের আনন্দের সঙ্গেই বর্ষবরণের আনন্দেও মেতে উঠবেন।”

প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও শিল্পকর্ম বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা হবে। অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করবেন।