ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির পরও প্রস্তুতি কম: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ডিজি

শিল্প কারখানার দুর্যোগ ঝুঁকির বিষয়ে মালিকদের পাশাপাশি তদারকি প্রতিষ্ঠানের দায় দেখছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2023, 03:49 PM
Updated : 23 Dec 2023, 03:49 PM

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উন্নতি করলেও ভূমিকম্প ও অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও একটা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান। 

প্রতিবছর লাখ লাখ ভবন নির্মাণ হলেও সেগুলো ভূমিকম্প মোকাবিলায় বিল্ডিং কোড অনুসরন করছে না। সে কারণেই দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। 

শনিবার ‘দুর্যোগের ঝুকি ও সংকট ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।  

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড এর সঙ্গে যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। 

মহাপরিচালক বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো দুর্যোগ আসতেই পারে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে প্রাণহানি বেড়ে যায়। বাংলাদেশে ঝড় জ্বলোচ্ছ্বাস মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়লেও ভূমিকম্প মোকাবিলার তেমন প্রস্তুতি নেই। 

“ভূমিকম্প নিয়ে আমি দুশ্চিন্ত। কারণ বাংলাদেশে অতীতে যেসব ভবন হয়েছে সেগুলো ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মেনে হয়নি। এখনও ঢাকায় বছরে লক্ষাধিক ভবন নির্মাণ হয়। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষের মতো বিল্ডিং নির্মিত হয়। যেহেতু বাংলাদেশ তিনটি সক্রিয় প্লেটের ওপর অবস্থান করছে। এই সিসমিক জোনে বাংলাদেশের অবস্থান খুব ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের ভেতরে ভূমিকম্পের উৎপত্তির ঘটনা ঘটেছে। এই বছর ৫ মাত্রার ওপরে প্রায় ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে।” 

ইতোমধ্যে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান এ দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করে দেখিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন জাপানে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু তাদের সেই প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তারা ভবনগুলো সেই ভাবেই নির্মাণ করেছে। আমরা এখন থেকে নিজেদের প্রস্তুত না করলে কিন্তু একটা ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।” 

দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসরকারি খাত, দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজানোর কথা বলেন তিনি। 

অনুষ্ঠানের অতিথি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে অথবা লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক সময় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়মের বাইরে গিয়েও অনেক কাজ করতে হয়। শুধু আইন ও নীতির জন্য অপেক্ষা করলে হবে না। যখন যেই পদক্ষেপ নেওয়া পয়োজন সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে। শিল্প কারখানার দুর্যোগ ঝুঁকির বিষয়ে মালিকদের পাশাপাশি তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। 

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এ পর্যায়ে এসেছে। আমাদের শিল্প কারখানাগুলো যেন কমপ্লায়েন্স হয়, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করে, বাসাবাড়ি, কারখানা, শপিংমলগুলো যাতে যথাযথ দুর্যোগ প্রস্তুতি থাকে সেই লক্ষ্য আজকের আয়োজন। 

গত কয়েক বছরে শিল্প কারখানায় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার জন্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষগুলোও সমানভাবে দায়ী বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। 

তিনি বলেন, “শিল্পে দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে শিল্পমালিকদের দায়ী করে লাভ নেই। সবাই মিলে কীভাবে এই নিরাপত্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সেই উপায় বের করতে হবে। শপিং মলগুলো বিশেষ করে উঁচু ভবনগুলোর কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।”

অ্যাকশন এইডের বাংলাদেশ অংশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যপুষ্ট বেসরকারি সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। গত দুই দশক ধরে ঢাকায় উঁচু ভবনে অগ্নিকাণ্ডসহ বড় বড় দুর্যোগগুলোতে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে অ্যাকশন এইড। 

অনুষ্ঠান শেষে অ্যাকশন এইড ও এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে দুর্যোগ প্রশমনে বিভিন্ন যৌথ কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।