এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৭টি।
Published : 09 Feb 2025, 11:04 PM
অমর একুশে বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরের পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ। মেলার সীমানা দেয়ালের ভেতরেই এমন নান্দনিক একটি মঞ্চ পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। বইমেলার ডামাডোলের মধ্যেই নেই কোনো আয়োজন।
বইমেলাকে ঘিরে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে একাধিক অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার সীমানার ভেতরেই স্থায়ীভাবে থাকা এই মঞ্চটি ব্যবহার করার কোনো উদ্যেগ নেই। মঞ্চটির টয়লেটকে কেবল দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।
মুক্তমঞ্চের গ্যালারিতে মাদকাসক্তদের আনাগোনা থাকে বলেও অভিযোগ করেন বইমেলায় আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ। এতে মেলার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কাও আছে।
মেলার লিটলম্যাগ চত্বরের বেঞ্চিতে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফিয়া সুলতানা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে তো উদ্যানের এই মুক্তমঞ্চে নাটক হতে দেখেছি। এবার মঞ্চটি খালি পড়ে আছে। অনেক নোংরাও। কেউ কেউ সেখানে বসে মাদক সেবন করছেন। এই মঞ্চটি খালি রেখে বইমেলায় অস্থায়ী মঞ্চ বানানো হয়েছে। অথচ এই মঞ্চটি ব্যবহার করা হয় না।”
বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে মূল মঞ্চ। যেখানে প্রতি সন্ধ্যায় আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, গানসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে 'লেখক বলছি' মঞ্চ এবং 'জুলাই মঞ্চ'।
বইমেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিন যে সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়, সেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে করা যেতে পারে বলেও মনে করেন সাফিয়া।
মেলা প্রাঙ্গণেই মুক্তমঞ্চটি খালি পড়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মঞ্চটি মূলত শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্বে। তারা এখানে অনুষ্ঠান আয়োজন করে।”
শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ আয়োজনে আগামী ১৯-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তমঞ্চে ‘অমর একুশে নাট্য উৎসবের’ আসর বসবে।
রোববার ছিল বইমেলার নবম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল থেকে কিছুটা ঢিমেতালে চলে মেলা। লোক সমাগমও ছিল ছুটির দিনের তুলনায় কম। কেউ কেউ স্টলে ঘুরে কেনেন পছন্দের বই। অন্যপ্রকাশ থেকে বই কেনেন সাফুয়ান।
তিনি বলেন, “এবার মেলার নান্দনিকতা প্রশংসনীয়, কিন্তু স্টল খুঁজে পাওয়াটা সহজ নয়। প্রত্যেক সারিতে দিকনির্দেশক থাকা উচিত ছিল।”
বইমেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, রোববার মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৭টি। এর মধ্যে আগামী প্রকাশনী এনেছে নেহাল করিমের সংকলন ও সম্পাদনায় 'আহমদ শরীফ স্মৃতি বক্তৃতামালা'।
ঐতিহ্য এনেছে মুমিত আল রশিদের অনুবাদে আব্বাস কিয়ারোস্তামির 'হয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হাউস'।
অনন্যা এনেছে স্বকৃত নোমানের 'নির্বাচিত গল্প’। আবিস্কার প্রকাশনী এনেছে গাজীউল হাসান খানের 'রাজনীতির অগ্নিপুরুষ ভাসানী'।
আলোচনা, গান কবিতা
এদিন 'লেখক বলছি' মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- আবু সাঈদ খান এবং পাভেল পার্থ।
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাকিদ হায়দারের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চঞ্চল আশরাফ। আলোচনায় অংশ নেন আসিফ হায়দার এবং শাওন্তী হায়দার। সভাপতিত্ব করেন আতাহার খান।
সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করেন সাহেদ মন্তাজ, শাহ কামাল সবুজ ও আফরোজা পারভীন।
এছাড়া ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এবং ঢালী মোহাম্মদ দেলোয়ারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন সুমন মজুমদার, শারমিন সাথী ইসলাম, সুনীল সূত্রধর, ড. পরিতোষ মণ্ডল, ফারহানা আক্তার শার্লি এবং শাহনাজ নাসরীন ইলা।
সোমবার যা থাকছে
সোমবার দশম দিনে বইমেলার দ্বার খুলবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : মনিরুজ্জামান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেবেন সালমা নাসরীন এবং মামুন অর রশীদ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।