“এরপর ডিমের দাম যখন কম থাকবে সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন। বহুদিন থাকবে, সহজে নষ্ট হবে না। সব কিছুর বিকল্প ব্যবস্থা আছে, বলেন তিনি।
Published : 29 Aug 2023, 07:56 PM
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত ‘সিন্ডিকেটের’ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেরা উৎপাদন বাড়ালে, বিকল্প উপায়ে গেলে তা এমনিতেই ভেঙে যাবে।
মঙ্গলবার গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মৌসুমের সময় ফসল এবং যখন দাম কম থাকবে তখন ডিমের মতো খাদ্যপণ্য বিকল্প উপায়ে সংরক্ষণের বিকল্প উপায় কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউজ আছে তারাই ব্যবসা করে। যখন আর্টিফিশিয়ালি দাম বাড়ায়, আমরা সাথে সাথে আমদানি করি অথবা বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তখন তারা বাধ্য হয় দামগুলো কমাতে।
‘‘খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে আমরা সাথে সাথে তো ব্যবস্থা নেই। কাজেই সিন্ডিকেট থাকলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না… এটা তো কোনো কথা না। কে কত বড় সিন্ডিকেট আমি জানি না। তবে আমি দেখব কি ব্যবস্থা করা যায়।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে নিত্যপণ্য নিয়ে মৌসুমী ব্যবসা পরিচালিত হয়। মজুদ আছে, সরবরাহ আছে, তারপরও হঠাৎ করে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, ডাব, কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যায়। এরকম সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশে ব্যবসা করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। সিন্ডিকেটের একথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বলেন যে, এটাতে হাত দেওয়া যায় না, দিতে গেলে বিপদ আছে। এ ব্যাপারে মৌসুমী ব্যবসা যারা করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন কি না?
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নিয়ে থাকি। কিন্তু বিপদ আছে- কে বলেছে, আমি ঠিক জানি না। কোন মন্ত্রী বলেছেন?”
তখন এ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর ‘সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না’ বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি দেখব। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির পেছনে এক শ্রেণির সিন্ডিকেট রয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে নিয়ম আছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এখন হয়ত সকলের আয় বেড়ে গেছে, যেমন আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, শীতকালে বাজারে প্রথম শিম উঠলে কে কত বেশি দামে কিনতে পারে-এটার একটা প্রতিযোগিতা হত। দুইদিন দাম কমে যেত।”
আবার বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা তো রয়েছে যে- কাঁচা মরিচ এখন শুকনা করে রেখে দেওয়া যায়, পেঁয়াজ শুকিয়ে সুন্দর করে রেখে দেওয়া যায়। সেটা বলার পরে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তারপরে যে জিনিসটা বেশি হবে সেটা ভালো করে রোদে শুকিয়ে রেখে দিলে অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। বিকল্প ব্যবস্থা তো আছে।
ইউনূসের জন্য বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠান: প্রধানমন্ত্রী
নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
জনগণ ভোট দিলেই নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’: শেখ হাসিনা
“বিশেষ করে বর্ষাকালে এখন অন্তত বলতে পারি শিম, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো বাংলাদেশে হতো কখনও? হতো না। এগুলো তো সব শীতের সবজি। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা সবকিছু গবেষণা করে ১২ মাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করেন। ভবিষ্যতে এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ…সাইলো তৈরি করা সেখানে সেগুলো সংরক্ষণ করা, আমরা সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘‘ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আমার কথা হল, তিনি আমাদের এখান থেকে চাল কিনতে চান। বললাম যে, আমাদের তো ১৭ কোটি মানুষের খাবার দিতে হয় আগে, আর আমি তো গরীব মানুষদেরকে বিনা পয়সায় খাবার দেই। আমি আগে দেখব উদ্ধৃত্ত যদি থাকে তাহলে আপনাকে দেব।
‘‘এখন অনেক দেশ আমাদের তরিতরকারি চাচ্ছে। আমরা কিন্তু দিচ্ছি। আমাদের তরিতরকারি সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। এটা তো সুপার মার্কেট চেইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। পৃথিবী তো ছোট হয়ে আসছে। কিছু পণ্য তো বাইরেও যাচ্ছে।”
চাহিদা মেটাতে নিজেদের চাষাবাদের বিষয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সেজন্য আমি বলেছি নিজেরা উৎপাদন করেন। নিজেরা কৃষি ভূমিতে উৎপাদন করতে পারেন তাহলে তো বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা থাকে না। নিজেরা যত উৎপাদন করতে পারেন সিন্ডিকেট এমনি ভেঙে যাবে। ওদের আর কিছু করার থাকবে না।
‘‘এটা করলে তো ভালো হবে। দেখেন ছাদবাগান-টাগান তো ভালোই চলছে। আমার প্রচুর কাঁচা মরিচ হয়েছে, কাঁচা মরিচের ছবি তুলে দিয়েছিলাম। নিজের কাঁচা মরিচের গাছ থেকে একটা কাঁচা মরিচ ছিঁড়ে খাওয়া। এটার আলাদা টেস্ট, তাই না। সবাই নিজেদের আঙিনায় শাকসবজি লাগান-এই সিন্ডিকেট কিছু করতে পারবে না।”
চাইলে পাব না সেই অবস্থাটা আর নাই: ব্রিকসের সদস্য পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আবার ডিম নিয়ে শুরু করল। ঠিক আছে এরপর ডিমের দাম যখন কম থাকবে সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন। বহুদিন থাকবে, সহজে নষ্ট হবে না। সব কিছুর বিকল্প ব্যবস্থা আছে।
‘‘ডিম সেদ্ধ করে আপনি যদি ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন ডিম ভালো থাকবে অনেকদিন। রান্না করে খাওয়া যায়, ভর্তা করেও খাওয়া যায়। আমরা রাখি খাই, দেখি বলি। এটা তো নিজের থেকে শেখা।”
তিনি বলেন, ‘‘অভাব যেন না থাকে সেটা দেখব। বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব এই সিন্ডিকেটের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেব, এটা এমনি ভেঙে যাবে।”