আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে।
Published : 02 Aug 2024, 04:44 PM
কোটা আন্দোলন ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে, আন্দোলনকারীদের ওপরে নিপীড়ন এবং মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধে তিনটি দাবি নিয়ে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সমাবেশ করেছে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ নামের সংগঠন।
অন্যদিকে উদীচী সমাবেশ করেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। একই সময়ে বাংলামোটরে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক’ ব্যানারেও আরেকটি সমাবেশ হয়েছে। পৃথক তিনটি আয়োজন থেকেই হত্যার বিচার দাবি করা হয়।
শুক্রবার ঢাকার সাত মসজিদ রোডে (ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠের পাশে) ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ আয়োজিত সমাবেশে, আলোকচিত্রশিল্পী, পারফরমেন্স শিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, শিল্পসংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টায় যখন সমাবেশ শুরু হয়, তখন ঝুম বৃষ্টি। বর্ষণের মধ্যেই 'জনতায় আস্থা/ স্বৈরতন্ত্রে অনাস্থা' স্লোগান দেন সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা।
তারা পরিবেশন করেন পারফরমেন্স আর্ট, যেখানে তুলে ধরা হয় হত্যা, গুমসহ নানা অনাচারের চিত্র। প্রতিবাদী ছবি আঁকেন শিল্পীরা। গান-কবিতায়ও প্রতিবাদ জানান শিল্পীরা। তুলে ধরেন তাদের দাবি।
সমাবেশের পর অংশগ্রহণকারীদের একটি মিছিল ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরের বাংলাদেশ আই হসপিটালের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে সমাবেশ থেকে তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো-
• আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়া।
• কারফিউ তুলে নিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় গুণ্ডাবাহিনী মুক্ত করা।”
• কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনের নামে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য তদন্ত ও বিচার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ।
এই সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন মোস্তফা জামান, ইমতিয়াজ আলম বেগ, অরূপ রাহী, বিথী ঘোষ, আমিরুল রাজীব, শেহজাদ চৌধুরী, শাওন চিশতি, কাজি তাহসিন আগাজ অপূর্ব, রাইয়ান ইসলাম, মেহবুবা মাহজাবীন হাসান, নুজহাত তাবাসসুম আনন, সাজান, তানজিম ইনিয়াত, নাঈম উল হাসান, রীশাম শাহাব তীর্থ, অসিত রায়, সুবর্না মোর্শেদা, তাপসী, আফসানা শারমিন ঝুম্পা।
‘ছাত্র হত্যার দায়’ এড়াতে পারে না সরকার: উদীচী
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংঘাত-সহিংতায় হত্যাকাণ্ডের দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে মনে করে উদীচী। জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করে এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন উদীচী নেতারা।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সমাবেশস্থলের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি প্রতীকী কফিন রাখা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
অমিত রঞ্জন দে বলেন, “শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন, নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করেছে রাষ্ট্র। এসব হত্যাকাণ্ডের দায় কোনভাবেই সরকার এড়াতে পারে না।
“সাধারণ মানুষ যখনই কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত হয়, যখনই গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, যখনই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে তখনই তাদেরকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। ”
উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, “২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন এবং বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের রায়ের পরপরই সরকার চাইলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে পারত। কিন্তু এখন এটিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার।”
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সরকারের বাহাত্তরের সংবিধানকে পূর্ণাঙ্গরুপে প্রতিষ্ঠা করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বদিউর রহমান।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ছাত্রনেতা এনামুল হাসান অনয়, লাকী আক্তারসহ আরো অনেকে।
এ সময় 'বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা/ আজ জেগেছে সেই জনতা', 'মানব না এই বন্ধনে/ মানব না এই শৃঙ্খলে', 'কারার ওই লৌহ কপাট'সহ আরো কয়েকটি গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পী শাওন ও মীর সাখাওয়াত এবং লাকী আক্তার। আবৃত্তি করেন সৈয়দা রত্না, মনীষা মজুমদার, শাহিদা ফাল্গুনী ও সানাম খান।
‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ‘গণহত্যা ও দেশব্যাপী নিপীড়নের’ প্রতিবাদে মানবন্ধন করেছে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ নামের সংগঠন। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সম্মতি জানাতে তারা রাজপথে এসেছে বলে সমাবেশ থেকে জানানো হয়।
শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রাস্তার প্রবেশমুখে এ প্রতিবাদী মানবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এসময় ‘স্বৈরাচারীর গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’সহ আরো কিছু স্লোগান দিতে দেখা যায় মানববন্ধন অংশগ্রহণকারীদের।
মানববন্ধন শেষে কাওরানবাজার অভিমুখে পদযাত্রা করেন বিক্ষোভকারীরা।