বন্যা উপদ্রুত এলাকায় কৃষি কর্মীদের ছুটি বাতিল। পানি নেমে যাওয়ার পর স্বল্পমেয়াদি ধান চাষের পরামর্শ।
Published : 22 Aug 2024, 11:12 PM
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু, মেডিকেল টিম গঠনসহ আটটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের পরিচালক, ওই দুই বিভাগের সব সিভিল সার্জনসহ কর্মকর্তাদেরকে এই নির্দেশনা দেন অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।
ভারত থেকে আসা ঢলে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বাজে অবস্থায় আছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা। বাড়িঘর, সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মোবাইলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদক্ষেপ
• বন্যাকবলিত এলাকার সব সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু রাখতে হবে।
• প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মেডিকেল টিম গঠন করে দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখতে হবে।
• বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডায়রিয়া, সর্প দংশনসহ বন্যা সংক্রান্ত অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য যথোপযুক্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, অ্যান্টিভেনম মজুত রাখতে হবে।
• বন্যাদুর্গত এলাকার হাসপাতালে যন্ত্রপাতিগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য উঁচু স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
• জরুরি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী মজুত এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রীসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতে হবে।
• বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর সব চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
• স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য বন্যাদুর্গত এলাকার সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
• বন্যা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় ও যোগাযোগ রাখতে হবে।
কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
একই দিন কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যাকবলিত এলাকায় কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এতে জানানো হয়, বন্যায় ১২ জেলার ৬৮ হাজার ২০৯ হেক্টর আউশ, ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ হেক্টর আমন, ৫৭০ হেক্টর বোনা আমন, ১২ হাজার ৯১০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ৯ হাজার ৫১৯ হেক্টর শাক-সবজি, ৩৮৪ হেক্টর আখ এবং ১৯১ হেক্টর পানের ক্ষতি হয়েছে।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর উঁচু এলাকায় আপৎকালীন নাবী জাতের রোপা আমন বীজতলা তৈরি, ভাসমান বীজতলা তৈরি, স্থানীয় জাতের বদলে উফশী জাত আবাদ, স্বল্পমেয়াদি ধানের চাষসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে কৃষকদের অনুরোধও করেছে মন্ত্রণালয়।
সেনা মোতায়েন
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেনাবাহিনীও কাজ শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মীরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েনের তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যগণ নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়ে নিরলসভাবে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।"
এছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
গত বুধবার হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদ্যরা ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে মোতায়েন রয়েছে।
আইএসপিআর বলেছে, বন্যা কবলিত জেলাগুলো থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক ছয় হাজার বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ চলমান রয়েছে।
সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশনগুলোও নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ফেনীতে নৌবাহিনী
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কাজ করছে।
উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে বৃহস্পতিবার ২টি নৌ কন্টিনজেন্ট যোগ দিয়েছে এবং আরও ২টি কন্টিনজেন্ট ফেনীর উদ্দেশে যাবে।
বৃহস্পতিবার রাতে আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, নৌবাহিনীর ১৩ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রী, বোট, লাইফ জ্যাকেট ও ডুবুরিসহ প্রায় দুই শতাধিক নৌ সদস্য উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
উদ্ধারের পাশাপাশি অসহায়, গরিব ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ ও খাওয়ার স্যালাইনসহ মানবিক সহায়তা প্রদান এবং পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বোঝাই ট্রাক ফেনীর উদ্দেশে রওনা করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিকে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই উদ্ধার কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবা ও ত্রাণ সহায়তা চলমান থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।