পাকিস্তানি সেনা ও দোসরদের হাতে নির্যাতনের শিকার নারীদের করুণ গল্প শুনে টেড কেনেডি জুনিয়র বলে উঠলেন– ’ও মাই গড!’
Published : 30 Oct 2022, 09:31 PM
ছোট-বড় ছয়টি ছবি ও পেপার কাটিংয়ে সাজানো হয়েছে ফটো স্ট্যান্ড, সেখানে স্থান পেয়েছে একাত্তরে আগরতলার শরণার্থী শিবিরে তোলা এডওয়ার্ড মুর কেনেডির দুটি ছবিও।
কিন্তু তার ছেলে কেনেডি জুনিয়রের চোখ আটকাল ছোট্ট একটি পেপার কাটিংয়ে। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দি ব্রায়ান টাইমস পত্রিকার ওই খবরে বলা হয়েছে, একাত্তরে ধর্ষণের শিকার বাঙালি নারীদের গর্ভপাত করাতে বাংলাদেশে আসছে মার্কিন চিকিৎসক দল।
পাকিস্তানি সেনা ও দোসরদের হাতে নির্যাতনের শিকার সেই নারীদের করুণ গল্প গবেষক আইরিন খান যখন বলছিলেন, তখন টেড কেনেডি জুনিয়রের কণ্ঠে শোনা যায়– ’ও মাই গড!’
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়ানো এডওয়ার্ড মুর (টেড) কেনেডির ছেলে এডওয়ার্ড কেনেডি জুনিয়র সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন শনিবার। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এক সপ্তাহের সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার তিনি যান ধানমণ্ডির বেঙ্গল গ্যালারিতে।
এই সফরে তার সঙ্গী হয়েছেন স্ত্রী ক্যাথরিন ‘কিকি’ কেনেডি, মেয়ে কিলি কেনেডি, ছেলে টেডি কেনেডি, ভাতিজি গ্রেস কেনেডি অ্যালেন ও ভাতিজা ম্যাক্স অ্যালেন।
প্রদর্শনীর ওই ছবি দেখে টেড কেনেডি জুনিয়র ও তার স্ত্রী যখন অন্য ছবির দিকে যান, তখন তার ছেলে-মেয়ে ও ভাতিজাদের দৃষ্টি আটকে ছিল সেই পেপার কাটিংয়েই।
বেঙ্গলের নওশীন খায়ের তাদেরকে ওই ছবির ইতিহাস বললে কেনেডি পরিবারের এক জুনিয়র সদস্য বলেন, “খুবই মর্মান্তিক ঘটনা’।
প্রদর্শনীর ঘুরে দেখার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নে টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, “প্রদর্শনীর ছবিগুলো যে কোনো মানুষের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।
“তবে আমাদের পরিবারের জন্য এসব ছবি বেশি গুরুত্ব বহন করে, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি আমার প্রয়াত বাবার ভিডিও; যেখানে তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এবং ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া নির্যাতন ও বিপর্যয়ের সাক্ষী হিসাবে তিনি যা দেখেছেন।”
‘ভয়েসেস অব বাংলাদেশ: দ্য জার্নি টু ফিফটি’ শীর্ষক ভ্রাম্যমাণ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন টেড কেনেডি জুনিয়র।
দুদেশের সম্পর্কের ৫০ পূর্তি উপলক্ষে এ প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনেটর টেড কেনেডিসহ যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী ও জনগণের বিভিন্ন অংশের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকায় আসতে পেরে ‘অভিভূত’ হয়েছেন জানিয়ে টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, “আমার বাবার কাজ এবং নতুন দেশের ঠিক সূচনার সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোয় আমরা গর্বিত।”
একাত্তরে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মার্কিন সরকার পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু ডেমোক্র্যাট সেনেটর টেড কেনেডি মার্কিন সেনেটে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি।
তার সেই ভূমিকার কথা স্মরণ করে তার ছেলে বলেন, “তিনি ভেবেছিলেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভুল পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা এখন জানি, বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ছিল অবধারিত, তবে প্রশ্ন ছিল– সেটা কখন হবে। এটা আমাদের গর্বিত করে যে তিনি (টেড কেনেডি) সে সময় দাঁড়িয়েছিলেন সঠিক অবস্থানে।”
টেড কেনেডি জুনিয়রের ভাষায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘সুদীর্ঘ ও অবিচল‘।
“আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে এখানে আসতে পেরে আমরা খুব খুশি।”
প্রদর্শনী শেষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনেই শিল্পী কাজী গিয়াস উদ্দিনের একটি প্রদর্শনী এবং লাইব্রেরি পরিদর্শন করেন কেনেডি পরিবারের সদস্যরা।