ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
Published : 11 Aug 2024, 01:37 AM
দেশের পঞ্চবিংশতিতম প্রধান বিচারপতি হিসেবে রোববার দুপুরে শপথ নেবেন হাই কোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
শনিবার রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করার পর রাতেই তার শপথের সময়ের বিষয়ে তথ্য আসে।
আপিল বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রোববার দুপুর ১২টায় শপথ গ্রহণ করবেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে প্রধান বিচারপতির এই নিয়োগ কার্যকর হবে।
নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে শপথ পড়াবেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু তিনি (সৈয়দ রেফাত আহমেদ) সরাসরি হাই কোর্ট ডিভিশন থেকে প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন, সেক্ষেত্রে একবারই শপথ নিলে হবে। তিনি আপিলেট ডিভিশন ও প্রধান বিচারপতি হিসেবে একইসঙ্গে শপথ নেবেন।”
ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে শনিবার বিকালে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ঘোষণা আসে।
উচ্চ বিচারালয়ের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দিনভর বিক্ষোভের মধ্যে এসব পরিবর্তন হয়।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর রাতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন।
পরে রাতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন পদত্যাগ করেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতিদের মধ্যে শুধু বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের পদত্যাগের খবর আসেনি। তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করা হচ্ছে বলেও খবর আসে। তখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তা বাতিলের দাবি জানায়।
একই সঙ্গে সকাল ৯টার মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুইবারের উপদেষ্টা প্রয়াত আইনজীবী ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি করার আল্টমেটাম দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে রাতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিচারপতি আশফাকুলকে ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি করার খবরটি ‘বিভ্রান্তিকর’। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
এর ঘণ্টা খানেক পর অক্সফোর্ড থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী সৈয়দ রিফাত আহমেদকে দেশের পঞ্চবিংশতম বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
হাই কোর্টের বিচারপতিদের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাই কোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
তার বাবাও একজন খ্যাতনামা আইনজীবী; প্রয়াত সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল, যিনি পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেন।
সৈয়দ রেফাতের মা জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ছিলেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওয়াদাম কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সৈয়দ রেফাত আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসিতে মাস্টার্স ও পিএইচডিও করেছেন।
তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা জেলা আদালতে এবং ১৯৮৬ সালে হাই কোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন।