ঢাকার ষষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত গত ১ জুন সম্রাটের পাসপোর্ট দুই মাসের জন্য তার জিম্মায় দেওয়ার এবং সেই সঙ্গে চিকিৎসার জন্য তাকে এক মাসের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেন।
Published : 16 Jul 2023, 03:12 PM
অবৈধ সম্পদের মামলায় জামিনে থাকা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিদেশ যাওয়ায় অনুমতি স্থগিতে দুদকের আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে দুই সপ্তাহ।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১ অগাস্ট নতুন তারিখ ঠিক করে দেয়।
ঢাকার ষষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এর বিচারক মঞ্জুরুল আলম গত ১ জুন সম্রাটের পাসপোর্ট দুই মাসের জন্য তার জিম্মায় দেওয়ার এবং সেই সঙ্গে চিকিৎসার জন্য তাকে এক মাসের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ওই অনুমতি স্থগিত চেয়ে দুদক হাই কোর্টে আবেদন করে গত ১৩ জুলাই।
গত বছরের ২২ অক্টোবর সম্রাটের স্থায়ী জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী। তখন দুদকের পক্ষ থেকে স্থায়ী জামিনের বিরোধিতা করা হয়। পরে ১ জুন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৬ জুলাই পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করে। সেদিন এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ওইদিন একই আদালত অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন পিছিয়ে আগামী ২৮ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেয়। সেসময় পর্যন্ত তার জামিনও বহাল রাখা হয়।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট আত্মগোপন করেন।
এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
এরপর ওই বছরের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
গত বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে চার মামলায় জামিন পান সম্রাট। পরে কারাগারে যাওয়ার ৩১ মাস পর তার মুক্তি মেলে।