অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের পাশাপাশি এসেছিলেন রাজনীতিকরা; কূটনীতিকরা ছাড়াও অতিথি ছিলেন অন্যান্য শ্রেণি পেশার ব্যক্তিরাও।
Published : 26 Jan 2025, 11:09 PM
বাংলাদেশের সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, রাজনীতি, সুশীল সমাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদমাধ্যম, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ আর কূটনৈতিকদের নিয়ে ঢাকায় প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করেছে ভারতীয় হাই কমিশন।
শনিবার ঢাকার হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য এ উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা ও তার স্ত্রী মানু ভার্মা অতিথিদেরকে স্বাগত জানান। বক্তৃতা পর্বের পর ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উদযাপন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
স্ত্রী শীলা আহমেদকে নিয়ে আয়োজনে অংশ নেন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ছিলেন অতিথদের সারিতে।
নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসানসহ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা আয়োজনে অংশ নেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরীও অংশ নেন আয়োজনে।
গণফোরামের এমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনও এসেছিলেন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের এ অনুষ্ঠানে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানও ছিলেন অতিথিদের তালিকায়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার অংশ নেন আয়োজনে।
অতিথিদের সারিতে ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মুখপাত্র মাহী বি চৌধুরী।
হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকও উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের আয়োজনে।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দিল্লিতে বাংলাদেশের পরবর্তী হাই কমিশনার হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ এবং মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও দেখা গেছে অতিথিদের সারিতে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, নেপালসহ ঢাকায় কূটনৈতিক মিশনগুলোর প্রধানরা ছিলেন অতিথিদের মধ্যে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে দেখা গেছে অতিথিদের সারিতে।
আয়োজনে এসেছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর ছিলেন অতিথিদের সারিতে।
সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ, অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম, সোহানা সাবা, শিল্পী মেহরীন আহমেদ এসেছিলেন অনুষ্ঠানে।
আয়োজনে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন জ্যাকপটের দলনেতা আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, বিগত বছরগুলোতে উভয় দেশ বিস্তৃত বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করেছে। পারস্পরিক সম্মান এবং একে-অপরের দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের বিষয়ে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সম্পর্ককে জোরালো করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই অঞ্চলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে স্বার্থে ভারতসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশ শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ‘প্রত্যাশা করে এসব সম্পর্ক হবে স্বচ্ছতা ও সমতার ভিত্তিতে’।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ”ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। জনগণ-কেন্দ্রিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে উভয়দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক শন্তিশালী হতে থাকবে।“
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অন্তর্ভূক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি এবং জনগণের প্রত্যাশার ভিত্তিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ”প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের এ সময়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং বাংলাদেশের জনগণকে আগামীর যাত্রায় শুভকামনা জানাই।
“গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভূক্তিমূলক বাংলাদেশকে আমরা সমর্থন দিয়েছি এবং দিয়ে যাব।”
সীমান্তের দুই প্রান্তের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক সবসময় ‘জনগণকেন্দ্রিক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের প্রতি আমাদের অভিন্ন ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আমাদের বন্ধন সংজ্ঞায়িত হয়।”