চোরের একটি দলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, দলের সর্দার জব্বার মোল্লা ৫০ বছর ধরে দুই শতাধিক বাড়ি থেকে হাজারেরও বেশি ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করেছেন।
Published : 09 Oct 2022, 07:25 PM
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চুরিতে জড়িত একটি দল গ্রেপ্তার হয়েছে, এই দলের সর্দার গত ৫০ বছর ধরে চুরি করে তার ৪ স্ত্রীকে চারটি স্থানে জমি কিনে দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শনিবার ঢাকার পল্লবী ও তাঁতিবাজার এলাকা এবং গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে জব্বার মোল্লাসহ (৬৭) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে জব্বারের সহযোগীরা হলেন আজিমুদ্দিন (৫২), মো. জামাল (৪৪) ও মো. আবুল (৫০)। এছাড়া দুই স্বর্ণের দোকানের মালিক আব্দুল ওহাব (৪৫) ও মো. আনোয়ার হোসেনকে (৪৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা চুরির গহনা কিনতেন বলে অভিযোগ।
রোববার দুপুর ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, জব্বার মোল্লা ৫০ বছর ধরে দুই শতাধিক বাড়ি থেকে হাজারেরও বেশি ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করেছেন।
“তাঁতি বাজারেই তারা প্রায় পাঁচশ’ ভরি এবং টঙ্গীর একটি মার্কেটে প্রায় তিনশ’ ভরি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেছে। জব্বার এসব চুরির টাকা দিয়ে নরসিংদী, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এলাকায় জায়গা কিনেছে এবং তার চার স্ত্রী এসব এলাকায় থাকে।”
গ্রেপ্তারের সময় জব্বার ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৮২ ভরি রুপার অলঙ্কার, নগদ প্রায় ১৭ লাখ টাকা, দরজা ভাঙার যন্ত্রপাতি এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গত ১৭ আগস্ট খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এলাকায় এক চিকিৎসক দম্পতির বাসায় দিনের বেলায় চুরি হয়। ওই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা হয়।
সেই মামলায় বলা হয়, চোরের দল বাসার তিনতলার দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ৪২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, চার হাজার ইউএস ডলার চুরি করে।
সেই চুরির তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ পল্লবী এলাকা থেকে গত শনিবার দলনেতা জব্বার মোল্লাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে স্বর্ণের দোকানের দুই মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “চোরদের কাছ থেকে এই দোকান মালিকেরা বাজারের চেয়ে অর্ধেকের কম দামে চোরাই স্বর্ণ কিনে থাকে।”
জব্বারের দলের কর্মপদ্ধতির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, “এই চোর চক্রটি প্রতিদিন সকালে নির্ধারিত জায়গায় মিলিত হয়। তারা সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি-টুপি পরে এলাকায় ঘুরে। যে বাসা বাড়িতে তালা লাগা এবং দারোয়ান বা সিসি ক্যামেরা নেই, সেই বাসায় টার্গেট করে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে চুরি করে।”
হারুন বলেন, “দলনেতা জব্বার প্রায় ৫০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত থাকলেও ২৭-২৮ বছর থেকে বড় ধরনের চুরির পেশার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে।”
জব্বার এর আগে কখনই গ্রেপ্তার হয়নি দাবি করলেও তা খতিয়ে দেখার কথা জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “তারা প্রায় দুইশ বাড়িতে চুরি করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে এবং এইসব বাড়ি থেকে চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার তাঁতিবাজারসহ রাজধানীর বাইরেও নির্ধারিত স্বর্ণের দোকানে মাত্র ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা ভরি দরে বিক্রি করে দেয়।”
খিলক্ষেত থানার মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার ঢাকার আদালতে পাঠায় পুলিশ। তাদের ১০ দিনের জন্য হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন বলে ঢাকার মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদদীন জানিয়েছেন।