জঙ্গি ছিনতাইয়ে ‘যোগাযোগকারী’ ছিলেন পলাতক সোহেলের স্ত্রী শিখা: সিটিটিসি

ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি বর্তমানে দেশের ভেতরেই আছে বলে ধারণা পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থাটির।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2023, 12:24 PM
Updated : 8 April 2023, 12:24 PM

মাস পাঁচেক আগে ঢাকার আদালতপাড়া থেকে যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাদের একজনের স্ত্রী শিখা ওই ঘটনায় যোগাযোগকারীর দায়িত্বে ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি। 

শিখাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। 

শুক্রবার রাতে পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখাকে (৩১) নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর আশ্রয়দাতা হিসেবে ধরা হয় হুসনা আক্তার ওরফে হুসনাকে (২২), যিনিও এক জঙ্গির স্ত্রী বলে সিটিটিসির ভাষ্য। 

সংস্থাটির কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, জঙ্গি ছিনতাইয়ের দিন শিখা তার বাবার সাথে আদালতে এসেছিলেন। তিনি বন্দি জঙ্গি এবং বাইরে থাকা সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করছিলেন। একপর্যায়ে কৌশলে বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি। 

জঙ্গি কার্যক্রমে শিখার সম্পৃক্ততার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) থেকে বিএসসি ডিগ্রি নেওয়া শিখা তারই ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের আদর্শে উদ্ধুদ্ধ হন। পরবর্তীতে সাইমন তার বোনকে সোহেলের সাথে বিয়ে দেয়।

Also Read: জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ‘প্রধান সমন্বয়ক’ ছিলেন মেহেদী: সিটিটিসি

Also Read: জঙ্গি ছিনতাইয়ে ‘জড়িত’ একজন গ্রেপ্তার

Also Read: পলাতক জিয়ার নির্দেশনায় জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশ

আসাদুজ্জামান বলেন, “সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার সদস্য থাকাকালে বিয়ে হওয়ার পর স্বামীর সাথে আরো গভীরভাবে সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন শিখা। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দীপন ও নীলাদ্রী নিলয় হত্যা মামলার আসামি হিসাবে সোহেল গ্রেপ্তার হলে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে স্বামীর সাথে যোগাযোগ রাখত।” 

স্বামীর নির্দেশনা অনুযায়ী শিখা আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান সিটিটিসি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। 

২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আনসার আল ইসলাম সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।

এ সময় আসামি আরাফাত ও সবুর নামে আরও দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করলেও পরে তাদের ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ঢাকার কোতোয়ালি থানায় টিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: তিন ডিআইজি প্রিজন্স, দুই জেল সুপার বদলি

Also Read: যাদের ছকে জঙ্গি ছিনতাই, তারা ‘চিহ্নিত’

Also Read: জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের কমিটি

এরপর ছিনতাই ঘটনার তিন দিন পর ‘আনসার আল ইসলামের সদস্য’ মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি দাবি করেছিল, তিনি এ ঘটনার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।

জঙ্গি ছিনতায়ে শিখা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় জানিয়ে শনিবার অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, “ছয়মাস আগে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে তারা। এর অংশ হিসাবে রাজধানীর আশেপাশের জেলায় একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে ওই সব বাসায় ঘনঘন বৈঠক করেন আনসার আল ইসলামের নেতারা। 

“এসব বৈঠকেই কারাগার হতে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ নভেম্বর যারা আদালতে হাজিরা দিতে আসবেন, তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। আর এই পরিকল্পনার মধ্যস্থতাকারী হিসাবে শিখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।” 

ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি বর্তমানে দেশের ভেতরেই আছে বলে ধারণার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানায় সিটিটিসি।