ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমাদের দেশের স্কোর কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর তুলনায় কম। এ সূচকে শুধুমাত্র কর্তৃত্ববাদীর মেয়াদ বলা যাবে না, এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও কিছুটা মেয়াদ চলে এসেছে।”
Published : 11 Feb 2025, 03:59 PM
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে গত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাতে তাদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে দুই ধাপ।
দুর্নীতির এই ধারণা সূচকের (সিপিআই) ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৫১ নম্বরে। গতবার এ তালিকায় বাংলাদেশ ১৪৯ নম্বরে ছিল।
আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে চতুর্দশ, যেখানে গতবছর ছিল দশম অবস্থানে।
১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এক বছরে দুই পয়েন্ট কমে হয়েছে ২৩। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০২৪ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক সংস্থা টিআই মঙ্গলবার তাদের এই বার্ষিক সূচক প্রকাশ করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ ‘হারাতে বসেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের স্কোর কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর তুলনায় কম। এ সূচকে শুধুমাত্র কর্তৃত্ববাদীর মেয়াদ বলা যাবে না, এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও কিছুটা মেয়াদ চলে এসেছে।”
গতবারের মতই এ সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থায় আছে কেবল মিয়ানমার ও আফগানিস্তান। ১৬ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) রয়েছে তালিকার ১৬৮ নম্বরে। আর তালিকার ১৬৫তম অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের স্কোর ১৬।
গতবারের মতই এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ৭২ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ১৮ নম্বরে। এরপর ভারত ও মালদ্বীপ ৯৬ (স্কোর ৩৮), নেপাল ১০৭ (স্কোর ৩৪), শ্রীলঙ্কা ১২১ (স্কোর ৩২), পাকিস্তান ১৩৫তম (স্কোর ২৭) ।
২৩ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে সূচকের একই অবস্থানের রয়েছে ইরান ও কঙ্গো।
সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে এবারই বাংলাদেশের স্কোর সবচেয়ে কম। অর্থাৎ, দুর্নীতি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এক যুগের মধ্যে এখনই সবচেয়ে বাজে।
এই সময়ের মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, এরপর প্রতিবছর স্কোর কমেছে ১ পয়েন্ট করে। ২০১৭ সালের ২৮ ছিল এই সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর।
ইফতেখারুজ্জান বলেন, অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, বিনিয়োগ করার সুযোগ কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলো করে দিচ্ছে; সেখান থেকে অর্থপাচারের চাহিদা আসছে।
“ওইসব দেশ থেকে প্রশ্ন এলে পাচার করাটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। আমাদের দেশ থেকে যেসব দেশে টাকা পাচার হচ্ছে, তাদের স্কোর আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। যেমন- সিঙ্গাপুরে আমাদের দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে, সিঙ্গাপুর হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। এই দুর্নীতির দায়ও আমাদের, অর্থাপাচারের দায়ও আমাদের। যদিও আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।”
৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পরও দেশে ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজি’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জান বলেন, “সুতরাং ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে, চেয়ারের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চলাচল পরিবর্তন হয়নি।”
এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদক সংস্কারে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশের স্কোর বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে সেটা নির্ভর করবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু কার্যকর এবং রাজনীতি ও আমলান্ত্রের পরিবর্তন কতটুকু হবে তার ওপর।
“দুদক অসংখ্য মামলা হাতে নিয়েছে, দুদক চেষ্টা করছে দায়িত্বটা কার্যকরভাবে পালন করার জন্য। কতটুকু হচ্ছে সেটা হয়ত আমরা পরে আরও বিশ্লেষণ করে বলব। কিন্তু এটা দৃশ্যমান যে তাদের (দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা) হাতে এ কাজগুলো দেওয়া হয়েছে।”
টিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের সূচকে ১৮০টি দেশের গড় স্কোর গতবারের মতই ৪৩। তালিকায় এবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সাউথ সুদান; তাদের স্কোর ৮।
এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সোমালিয়া, ভেনেজুয়েলা, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, ইরিত্রিয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, নিকারাগুয়া ও সুদান।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর নিয়ে গতবারের মতই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। এর পরে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউ জিল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া।