“প্রধান যে সড়কগুলোতে বাস চলে, সেগুলোতে যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা না চলে, সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হলে তাতে আমরা একমত হয়েছি,” বলেন রিকশা ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
Published : 27 Nov 2024, 10:38 PM
রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা না চালাতে পুলিশের দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়েছে মালিক- শ্রমিকপক্ষ।
বুধবার ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (মিডিয়া) মো. ওবায়দুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক, মালিক, গ্যারেজ মালিক ও রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল এদিন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকের পর রিকশা ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান যে সড়কগুলোতে বাস চলে, সেগুলোতে যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা না চলে, সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হলে তাতে আমরা একমত হয়েছি।”
তবে যেসব বেড়ি বাঁধে বাস চলে, সেসব সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালালে পুলিশের কোনো ‘আপত্তি নেই’ বলে জানান নাদিম।
তিনি বলেন, “নতুন করে আর কোনো রিকশা যেন রাস্তায় না নামে, সে ব্যাপারে বৈঠকে আহ্বান জানান হয়। ঢাকার বাইরে থেকে এসব বাহন যেন না ঢোকে, সে ব্যাপারেও একমত হয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টা কঠোরভাবে দেখা হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
আইনি বৈধতা না থাকলেও রাজধানীর অলিগলিতে দীর্ঘদিন থেকে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। তবে সরকার পতনের আন্দোলনের পর থেকে নগরীর প্রধান সড়কেও চলতে শুরু করে এসব বাহন।
এর মধ্যে বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন প্যাডেলচালিত রিকশা মালিক ঐক্যজোটের সভাপতি জহুরুল ইসলাম মাসুম ও সেক্রেটারি মো. মমিন আলী হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারি রিকশার কারণে তাদের রুটি রুজি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর হাই কোর্ট গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়।
স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
সেইসঙ্গে ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়।
হাই কোর্টের ওই আদেশের পর প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। তাতে জনভোগান্তি চরমে ওঠে। কয়েক জায়গায় সংঘর্ষও হয়।
এ পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে বিষয়ে শুনানি করে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক গত ২৫ নভেম্বর হাই কোর্টের আদেশের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন।
পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাই কোর্ট যে রুল জারি করেছিল, এক মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে বলে চেম্বার আদালত।
তাতে ঢাকার রাস্তায় আপাতত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের পথ খোলে। রিকশাচালকদের আন্দোলনেরও আপাত অবসান হয়।
আদালতের ওই সিদ্ধান্তের পর পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিকদের প্রতিনিধি দলকে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এখন থেকে প্রধান সড়কে কোনো অটোরিকশা চলবে না, কিন্তু ভেতরের সড়কগুলোতে পূর্বের ন্যায় এসব যান চলবে।”
নতুন কোনো ব্যাটারি রিকশা যাতে রাজধানীর রাস্তায় না নামে, সে ব্যপারে বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে সতর্ক করে ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন পুলিশ কমিশনার।
রিকশা ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নাদিম পরে বলেন, পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ, টঙ্গি দিয়ে যে রাস্তা ঢাকায় ঢুকেছে, সেসব রাস্তায় এসব বাহন আটকানোর ব্যপারে পুলিশকে কঠোর হতে বলেছেন তারা।
ঢাকা মহানগরীতে জোনাল পর্যায়ে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে তাদের কার্যক্রম চালানো হবে বলেও জানান তিনি ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসানসহ ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক, মালিক, গ্যারেজ মালিক ও রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পুরনো খবর
ব্যাটারির রিকশা নিয়ে 'উভয় সংকটে' ঢাকা
স্থিতাবস্থা জারি: ঢাকায় আপাতত চলবে ব্যাটারিচালিত রিকশা
ব্যাটারি রিকশার যন্ত্রাংশ আমদানিও বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির