“আগামী আসরে রুশ রূপকথা সিভ্কা-বুর্কা উপস্থাপন করা হবে,” বলেন শৈশবের ফারহানা মান্নান।
Published : 14 Feb 2025, 02:58 PM
‘শাখে শাখে পাখি ডাকে’, ‘মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি’ গান আর কাক-কলসীর গল্পের সঙ্গে চলছে পুতুল নাচ (পাপেট শো); সামনে বসে তা মনোযোগ দিয়ে দেখছে একদল শিশু।
ছুটির দিনে এসব শিশু মেলায় ভিড় করেছিল সিসিমপুর দেখার আশায়, বিকল্প হিসেবে পেল প্লে সেন্টার ‘শৈশবের’ পাপেট শো বা ‘গল্প পাঠের আসর’।
আসরে বসে শান্ত হয়ে গল্প শুনছিল যিশু ও শ্যাম। সকাল সাড়ে ৯টায় সাভার থেকে তাদের দুজনকে মেলায় নিয়ে আসেন বাবা ধনঞ্জয় তীর্থ।
দীর্ঘক্ষণ টানা রোদে থাকায় যিশু ও শ্যামকে কোমল পানীয় এগিয়ে দিচ্ছিলেন ধনঞ্জয়, তাতে শিশু দুটি খানিক বিরক্তই হলো।
ধনঞ্জয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসছিলাম তো সিসিমপুর দেখাতে; এসে দেখি নাই। এখন এটা দেখছে। ভালো লাগতেছে বলেই ওরা দেখতেছে। উঠছে না, নড়ছে না। নাহলে তো চলে যেত।”
কাচপুর থেকে মায়ের সঙ্গে এসেছে ফারদিনুর রহমান। সে বলল, “ভালো লাগছে। এগুলা আরও হলে ভালো লাগবে।”
গল্প শেষ হওয়ার পর পুতুলরা শিশুদের প্রশ্ন করছিল, তারা আর বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কি না, মোবাইল ব্যবহার করবে কি না। এসবের জবাবে শিশুরা সম্মিলিত স্বরে বলছিল, ‘না’।
‘শৈশবের’ প্রধান নির্বাহী ফারহানা মান্নান বলেন, এবারের মেলায় সিসিমপুর না আসায় বাংলা একাডেমির পরামর্শে তারা এ আয়োজন করেছেন।
“সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে সামনে এসে কাক এবং কলসীর গল্পটা উপস্থাপন করেছি, যাতে তারা শিখতে পারে। আগামী আসরে রুশ রূপকথা সিভ্কা-বুর্কা উপস্থাপন করা হবে।”
ফারহানা বলেন, “শিশুদের জন্য আয়োজনের একটা চাহিদা থাকে অভিভাবকদের থেকে, সেই কারণেই করা। সাড়া তো বেশ ভালোই পেলাম। প্রচার হলে আরও সাড়া পেতাম। বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট, ম্যাজিক শো থাকবে৷”
গল্প পাঠের আসরটি শুরু হয়েছে শুক্রবার। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলবে আয়োজনটি। তবে সরকারি ছুটি থাকায় এই শনিবার আয়োজনটি বন্ধ রাখা হবে।
মেলায় শিশুদের জন্য পাজল মেলানো, রঙ মেলানো, ছবি আঁকা আর বাস্কেট বল খেলার আয়োজন করেছে ‘কিডস জোন’। এটি চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
কিডজ জোনের কো-অর্ডিনেটর আব্দুল কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও এসেছি আমরা। এখানে অংশ নিতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।”
মেলার বাসন্তী রূপ
হলুদ রঙের সঙ্গে লাল ফিতা বাঁধা পোশাক পরে বাবা-মাকে নিয়ে শান্তিনগর থেকে মেলায় এসেছে নাভিয়া মুহূর্ত। স্টলে স্টলে ঘুরে বই খুঁজতে দেখা গেল শিশুটিকে।
সে বলল, “ভালো লাগছে মেলায় এসে। এখানে অনেক বই। বই কিনব, দেখব।”
মুহূর্তের মা তাহাবা নাশাতা বলেন, “বসন্ত, তাই হলুদ আর লালও আছে- একটু ভ্যালেন্টাইনের ছোঁয়া। সবকিছু মিলিয়ে এভাবে আসা।
“মোবাইল তো মোবাইলই, এখানে এসে অনেক বই দেখতে পারছে। লাইব্রেরিতে থাকলেও কম বই, এখানে তো অনেক বই। কাভারগুলো খুলল, আগ্রহ বাড়ল।”
দিবস অনুযায়ী মেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি নিয়ে বিক্রেতারা সন্তুষ্ট না হলেও- হলুদ, লাল শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়ে তরুণ-তরুণীদের ঘুরতে দেখা গেছে।
কারোর হাতে ফুল, কেউবা চুলে ফুল গুঁজেছেন।
মিরপুর থেকে লাল শাড়ি পরে মেলায় এসেছেন ইলমা আক্তার শশী। তিনি বলেন, “বসন্তের দিনের পরিবেশটা অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি ভাল লাগে- তাই আসা। ভালোবাসা দিবসও তাই ওইরকম মিলিয়ে শাড়ি পরে এসেছি৷”
পুরান ঢাকা থেকে শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে এসেছেন দুই তরুণ-তরুণী। তারা বলছিলেন, ফাগুনের দিনটি একসঙ্গে কাটানোর জন্য বইমেলাকেই বেছে নিয়েছেন তারা।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “দিনটা অন্যরকম; দুটো দিবস একসঙ্গে পড়েছে, তাই বের হওয়া হল। বই দেখব, কিনব- তারপর চলে যাব।”
নিজের দুই ছেলে আর বোনের ছেলেকে নিয়ে সিদ্ধেশ্বরী থেকে এসেছেন রোজানা রহমান।
তিনি বলেন, এবার আজকেই তাদের প্রথম আসা হয়েছে।
“বাচ্চারা ঘুরছে, তাদের বই কিনেছি। আগে তো এ সময়ে সিসিমপুর ছিল, তাই এসেছিলাম। এসে তো শুনি সিসিমপুর নেই, থাকলে বাচ্চারা এনজয় করত। এমনিতে ভালোই লাগছে।”
তাম্রলিপি স্টলের বিক্রয়কর্মী নাঈম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত শুক্রবার চেয়ে আজকে মেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি কসেছে।
“দিবস অুনযায়ী উপস্থিতি অনেক কম- অন্য সময় যেটা হয়, সেটা এবার নেই। হতে পারে বিকালে ভিড় বাড়বে।”
অন্যপ্রকাশ প্যাভিলনের বিক্রয়কর্মী তৌফিক ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও বোঝা যাচ্ছে না কেমন ভিড় হবে; দুপুরের পর ভিড়টা বোঝা যাবে।”
তবে বিক্রি কিছুটা বাড়ার কথা বলছেন শিশু চত্বরের ডাংগুলি স্টলের বিক্রয়কর্মী রাশেদুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত শুক্রবারের চেয়ে আজকে ভিড় আর বিক্রি একটু বেশি হচ্ছে।”