ধূপের গন্ধ ভরা পূজা মণ্ডপে আনন্দময়ীকে অঞ্জলী দেন পূজারী-ভক্তরা। শঙ্খনাদ আর ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে চলে অবিরাম মন্ত্রপাঠ।
Published : 23 Oct 2023, 02:14 PM
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী তিথিতে কল্পারম্ভ আর বিহিত পূজায় মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গাদেবীর অর্চনা করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
সোমবার সন্ধ্যায় হবে নবমীর সন্ধি পূজা। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকালের বিহিত পূজায় ব্যস্ত ছিলেন পুরোহিতরা। দেবীদুর্গার প্রার্থনা আর প্রণামে ভিড় করেন ভক্তরা, তাদের কেউ কেউ দেন প্রণামীও।
ধূপের গন্ধ ভরা পূজা মণ্ডপে আনন্দময়ীকে অঞ্জলী দেন পূজারী-ভক্তরা। শঙ্খনাদ আর ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে চলে অবিরাম মন্ত্রপাঠ।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বলেন, “মহানবমীর দিন সকাল থেকে শুরু হয়ে ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মণ্ডপে। সন্ধ্যায় হবে সন্ধিপূজা। দেবীর ভক্তরা উৎসবে মেতে উঠবে।“
ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনের যে যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।
অর্থাৎ নবমীর দিনটি কাটলে এসে যবে দেবী বিদায়ের দিন দশমী। তাই নবমীর বর্ণিল উৎসব-আনন্দের সঙ্গে বিদায়ের বিষাদও ছুঁয়ে যায় ভক্তদের।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা প্রণব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় পূজা এবং অন্যান্য রীতি পালন করা হচ্ছে। একেক দিনের পূজার ভিন্ন ভিন্ন মাহাত্ম রয়েছে। মূলত নবমীর দিন থেকে মাকে বিদায়ের সুর বেজে ওঠে ভক্তদের মনে। এদিন ভক্তরা যেমন উৎসব করে আবার মাকে বিদায়ের প্রস্তুতিও নেয়।”
পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ফিরবেনও তাতেই। এই বাহনের ফল হল ‘ছত্রভঙ্গ’।
ঢাকেশ্বরীর পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বলেন, “ঘোটকে যেহেতু দেবীর আগমন এবং গমন, সেটি অশুভ বার্তা, তবে ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলেই মিলবে শান্তি। মহানবমীতে তাই দেবীর কাছে ভক্তদের প্রার্থনা যেন মায়ের মন ভক্তের জন্য সহানুভূতিশীল হয়। অশুভের বিনাশ হয়, শুভশক্তির জয় হয়।”
ঢাকার রমনা কালী মন্দিরে সকাল ১০টায় দেখা যায়, ভক্তরা অঞ্জলি দিচ্ছেন। এরপর পুরোহিত প্রসাদ দেন সবাইকে।
এই মণ্ডপে পরিবার নিয়ে পূজা দিতে আসা ঢাকার সেগুনবাগিচার বাসিন্দা অমরেশ সাহা বলেন, “মায়ের কাছে সবার শান্তির জন্যই প্রার্থনা করেছি। মা যেন তার অপার মহিমায় আমাদের জীবনকে সুন্দর এবং আনন্দময় করে দেন।”
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়।
তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
এবারে শুক্রবার ষষ্ঠীতে হয় দেবীর বোধন। পরদিন শনিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হয় মহাসপ্তমীর পূজা। রোববার অষ্টমী তিথিতে কুমারী রূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সোমবার সকাল-সন্ধ্যা দুবেলা বিহিত আর সন্ধি পূজার আয়োজন। আর মঙ্গলবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
দেশজুড়ে এবার ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মণ্ডপে পূজা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান।
এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, গুলশান- বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ মণ্ডপ, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে মহাসমারোহে দুর্গা পূজা হচ্ছে।