“তার মানে হচ্ছে, ভালোমন্দের রায় আমরা দিই না, বাংলাদেশের মতো দেশকে লেকচার দিই না। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের সঙ্গে প্রকৃত অংশীদারত্বের কাজ করি।”
Published : 10 Jun 2024, 09:54 PM
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিদেশিদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দরকার বলে মনে করছেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ তিনি বলেন, “আমরা অংশীদার এবং বিদেশি। সুতরাং এটা আমাদের কাজ নয়, কথা বলা বা হস্তক্ষেপ করা।
“আমাদের কাজ হলো সম্পৃক্ত হওয়া, শোনা এবং সহযোগিতা করা। আমি মনে করি, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাই করার চেষ্টা করেছি।”
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যাত্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নীতিমালা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে বাংলাদেশের ‘ইতিবাচক তাড়না’ থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইউরোপিয়ানদের মতো উন্নত বিশ্বকে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে ‘মানসিকভাবে খাপ খাওয়ানো’ দরকার।
“তার মানে হচ্ছে, ভালোমন্দের রায় আমরা দিই না, বাংলাদেশের মতো দেশকে লেকচার দিই না। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের সঙ্গে প্রকৃত অংশীদারত্বের কাজ করি।”
বিদেশিদের এক্ষেত্রে দ্বিধায় পড়ার কথা তুলে ধরে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, “কোনো কোনো সময় মানুষ ধন্দে পড়ে যায়, তারা বলে ‘বাংলাদেশে তোমার এটা বলা উচিত, ওটা বলা উচিত।’ এটা কোনো কিছু শুরুর সঠিক বিন্দু নয়।
“আমরা আলোচনা করে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বব্যাপী নানা সংঘাত, ডিজিটালাইজেশনের মতো জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ একযোগে তুলে ধরি। এটাই হচ্ছে অংশীদারত্বের নির্যাস।”
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর অগাস্টে ঢাকায় ছাড়ছেন তিনি।
তার দায়িত্ব পালনের সময়ে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থান নিয়ে সমালোচনামুখর ছিল সরকার।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের উপর হামলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মিশনের সঙ্গে মিলে যৌথ বিবৃতি দিতে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনে দ্বাদশ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা করা হলেও তখন ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘সামনের দিকে তাকিয়ে’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশীদারত্ব বাড়াতে চায় ইইউ।
নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে চায় ইইউ
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহের কথাও সাংবাদিকদের বলেছেন রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি।
তিনি বলেন, “এটা এমন ক্ষেত্র, যেখানে আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি। ইসলামি উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কয়েক বছর ব্যয় করেছে। আমরা সবাই জানি, আট বছর আগে হোলি আর্টিজান বেকারিতে কী ঘটেছে।
“এবং এই বিষয়টি বাংলাদেশ কীভাবে কব্জায় এনেছে আমরা তা দেখেছি, যখন পৃথিবীর অনেক দেশ এটাকে কব্জায় আনার চেষ্টা এখনো করে যাচ্ছে।”
ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চায় ইইউ
মেরিটাইম নিরাপত্তা ও সেখানে অপরাধ পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি ‘ক্রিমারিও’ সফটওয়্যার ব্যবহার বাংলাদেশের উপকারে আসার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “আমি খুব খুশি যে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছি। এটা বেশ ছোটো প্রকল্প।
“এটা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার আলোচনায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনী এবং বিভিন্ন বাহিনীসহ প্রধান প্রধান ভূমিকা পালনকারীদের এক জায়গায় আনবে।”
সামাজিক মাধ্যমের গুজব ও মিথ্যা তথ্যের মোকাবেলার ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ‘রক্ষা ও সম্মানের’ বিষয় হিসেবে দেখার কথা বলেন ইইউ রাষ্ট্রদূত।
ডিক্যাব সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।