রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়লে তার সুযোগ অপরাধীরা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে শঙ্কা।
Published : 02 Aug 2023, 01:16 AM
এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অভিযান চালিয়ে ৪৩৩টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আটক করেছে র্যাব; এতে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪৯ জনকে। এই অবৈধ অস্ত্রের ২৪২টি উদ্ধার হয়েছে শুধু মে মাসেই। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তে প্রতি মাসে গড়ে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চোরাকারবারিরা ধরা পড়ছে।
জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তাপের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের এমন আনাগোনা বেড়ে যেতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আশঙ্কা।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ মনে করেন, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফায়দা লুটতে পেশাদার অপরাধী বা অবৈধ অস্ত্রের চক্রগুলো নড়াচড়া শুরু করেছে। এ সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কেউ কেউ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মনে করছেন, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়লে তার সুযোগ অপরাধীরা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ বছরের শুরুতেই এক সভায় দেশে অবৈধ অস্ত্রের সঠিক তথ্য বের করে তা উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিল।
এখন নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারের বিশেষ অভিযান চালানোর চিন্তা করছে পুলিশ।
নির্বাচনের আগে কেন উদ্বেগ?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাধারণভাবে দেখা যায় যে, নির্বাচনের আগে প্রতিদ্ব্ন্দ্বী দলগুলোর মধ্যেই কেবল সংঘাত শুরু হয় না, স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখা যায়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তখন অবৈধ অস্ত্রের কদর বাড়ে।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যায় এবং তখন বিদেশ থেকে বা দেশের মধ্যে যে রসদ আছে, তা দিয়ে অস্ত্র বানিয়ে সরবরাহ করে থাকে অস্ত্রের চোরাকারবারিরা। সেই ধরনের আশঙ্কা থাকে বলে দেখা যায়, নির্বাচনের আগে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্র মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য।”
অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল মনে করেন, অস্ত্রের উপস্থিতি যদি সমাজে থাকে। একজন স্বার্থসিদ্ধির জন্য বা অন্য কারও স্বার্থ হাসিল করে দেওয়ার জন্য এই ধরনের অস্ত্রের বা সংঘাতের পথ বেছে নেয়।
“এ ধরনের সংঘাত এড়ানোর জন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্মোহভাবে কাজ করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র কার কাছে আছে, সেটা দেখা যাবে না। সবাইকে ধরতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।”
বিশেষ অভিযানের চিন্তা
আব্দুর রশীদের শঙ্কায় সায় দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও বলছেন, নির্বাচনের আগে অস্ত্র চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যেতে পারে।
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন যে উত্তাপ বা পরিস্থিতি যা দেখছেন, সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হবে এবং রাজনীতির মাঠ আরো গরম থাকবে। তবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর আছে, সীমান্তে এবং দেশের অভ্যন্তরের বাহিনীগুলো সজাগ আছে।”
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান সবসময়েই চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৮৭৯টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে র্যাব উদ্ধার করে ১ হাজার ৩৫২টি।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, “অনেকের অস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে অস্ত্রটি অবৈধ হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ জাল লাইসেন্স বানিয়ে অবৈধ অস্ত্র বৈধ করার চেষ্টা করে। এসব অবৈধ অস্ত্রের তথ্য বের করে তা উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা পুলিশের রয়েছে জানিয়ে ডিআইজি আনোয়ার বলেন, “বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা হয়েছে (৩১ জুলাই)। তাদেরকে এই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চালাতে বলা হয়েছে।”
নির্বাচনের আগে বিশেষ অভিযান কবে নাগাদ চালান হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এখনও সময় আসেনি। সামনে দেখা যাক।”
দিয়াবাড়ির অস্ত্রের উৎসের খোঁজ নেই ৭ বছরেও
২০১৬ সালে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
দিয়াবাড়ির অস্ত্রগুলো কোন পথে দেশে এসেছিল? কারা এবং কেন এনেছে? তা সাত বছরেও বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দিয়াবাড়ি খালের অস্ত্র রহস্য হয়েই থাকলো
এ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার নিয়ে তুরাগ থানার করা সাধারণ ডায়েরিটির তদন্ত করছে পুিলশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সিটিটিসির প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “বলার মতো অগ্রগতি নেই। তবে চেষ্টা হচ্ছে।”
ফলে যে পথ চোরাকারবারিরা ব্যবহার করেছিল, সেই পথ এখনও খোলাই রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ।
তিনি বলেন, “অস্ত্রগুলো কোন পথ দিয়ে দেশে এসেছে, এটা বের করা খুবই জরুরি। আর কারা এনেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা আরও জরুরি। যেহেতু সাত বছরেও বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেশে আনার পথ খোলাই রইল।”
রশীদের মতে, অস্ত্র আর মাদক চোরাচালানের ক্ষেত্রে বিশেষ পথ ব্যবহার করা হয়। এই পথ যদি নিরাপত্তা বাহিনী চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়। তাহলে চোরাকারবারিরা তা ব্যবহার করতেই থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এনিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। তারা অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কারা দিয়াবাড়ির এই আগ্নেয়াস্ত্র এনেছে এবং কোন পথে এনেছে, তা শিগগিরই বের করবেন আশা করছি।”