দিনের শুরুতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
Published : 14 Dec 2024, 04:13 PM
১৯৭১ সালে নির্মমভাবে নিহত জাতির সূর্যসন্তানদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মানুষের ঢল নামে।
শনিবার জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে নানা বয়সী, নানা পেশার হাজারো মানুষ আসেন স্মৃতিসৌধে।
একাত্তর সালের এই দিনটিতে এ দেশীয় রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের সহায়তায় পাক সেনাদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন দেশের বরেণ্য শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পীসহ জাতির মেধাবী সন্তানেরা। পরে তাদের লাশ রাজধানীর রায়েরবাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি বধ্যভূমিতে ফেলে দেওয়া হয়।
পরাজয় আসন্ন বুঝতে করতে পেরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দেশীয় দোসররা দেশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করার লক্ষ্যে এই গণহত্যা চালায়।
সেই স্মৃতিকে অমর করে রাখতেই প্রতিবছর উদযাপিত হয় দিবসটি।
দিনের শুরুতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
বাড্ডা থেকে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছিলেন সরকারি চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন প্রজন্মকে এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তাই এখানে এসেছি, যাতে এটা তাদের মননে গেঁথে যায়। বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।”
মিরপুর-১ থেকে এসেছিলেন জাহিদুল ইসলাম। হাতে ফুল নিয়ে সঙ্গে স্ত্রীকেও নিয়ে আসা জাহিদ বলেন, “একাত্তরে জাতির বুদ্ধিজীবী এবং মেধাবীদের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এনে নির্মমভাবে গণহত্যা চালানো হয়। সেই স্মৃতির বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতেই আজ এখানে এলাম আমরা।”
রাজধানীর শ্যাওরাপাড়া থেকে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি ওই সময়ে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল। জাতিকে মেধাশূন্য করার এক গভীর চক্রান্ত ছিল এই হত্যাকাণ্ড। সেই নির্মম ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখতেই আজ এখানে আসা।”
আগারগাঁও তালতলা এলাকা থেকে আসা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাহা তাবাসসুম এসেছিল বাবার সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মুনতাহা বলে, “বইয়ে আমরা পড়েছি এই বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে। তাই বাবার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। গতবারও আমি এসেছিলাম।”
পরে বেলা বাড়তেই ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভিড় কমতে থাকে।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া, দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
এছাড়াও সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।