দুই দিনের সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা।
Published : 27 Jan 2025, 09:47 PM
পানি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো, পাঠ্যসূচিতে পানি ও নদী বিষয়ে শিখন-পাঠন অন্তর্ভুক্ত করা এবং স্থানীয় উদ্ভাবনগুলোয় আরও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেষ হল ১০ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন।
সোমবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি রিসোর্টে শেষদিনে পানি ও নদী রক্ষায় নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশনএইড বাংলাদেশর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, "দুই দিনের আলোচনায় আমরা পানি এবং নদী বিষয়ে অনেক সুন্দর আলোচনা ও প্রস্তাব পেয়েছি। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরব।
"এবারের সম্মেলনে আমরা 'হাইড্রো ডিপ্লোমেসি’ ও সমুদ্রের ভবিষ্যৎকে প্রাধান্য দিয়েছি। এ নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে, আমরা সেগুলো আন্তঃদেশীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে কাজ করব।"
পানির নায্য বণ্টন নিশ্চিতের দাবিসহ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে পানিবিষয়ক শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা, ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনের শেষদিনের প্রথম সেশনের আলোচনায় প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও জলবায়ু যোগাযোগ সমন্বয়ক মাইদুল ইসলাম মিঠুন বলেন, "পানিসংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের তরুণদের আরও সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিষয় আরও বেশি তুলে ধরতে হবে।”
জলবায়ু এবং পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, " নিঝুম দ্বীপ এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা চর বা এ সংক্রান্ত ভূমিগুলোয় অনেক সাফল্য আছে স্থানীয়দের। তারা টিকে থাকার জন্য তা করছে।
"লবণাক্ততা প্রতিরোধ, জীবন ধারণ এবং উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও। গণমাধ্যমে এগুলো আরও বেশি আসতে পারে।"
সম্মেলনে নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের বিশেষজ্ঞরার নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ বলেন, "নদী এবং পানি ঠিক রাখতে তরুণদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা, আরও বেশি পড়াশোনা এবং গবেষণায় জোর দিয়ে সরকার কাজ করছে।
"জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ইতোমধ্যে আমাদের এসডিজিতে রয়েছে। এখন পানির বিষয়টি রয়েছে, আমরা তাও সংযুক্ত করব। প্রয়োজনে পাঠ্যসূচিতেও যুক্ত করতে আমরা কাজ করব।"
শেষদিনের আলোচনায় উঠে আসে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানির ‘ন্যায্য’ হিস্যার বিষয়টি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক জয়ন্ত বসু বলেন, "এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমান সমান বণ্টন নীতি হওয়া উচিৎ।
"সেক্ষেত্রে প্রমাণভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের সম্পর্ক ঠিক করতে পারে। তিস্তা নদী নিয়ে আন্তঃসীমানা এবং 'ট্রান্স বাউন্ডারি ডিসকোর্স' অনুসরণ করা যেতে পারে।"
জয়ন্ত বসুর ভাষ্য, "নদী সংকট মানুষ তৈরি করছে। নদীকে নর্দমা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। এটা কলকাতায় হচ্ছে, ঢাকা, করাচি, কলম্বো সবখানেই হচ্ছে। এটি এখনই থামানো উচিত।"
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসীমানা রয়েছে, এমন নদীর ‘ডকুমেন্টশনেও’ জোর দেন এই শিক্ষক।
রোববার সম্মেলনের প্রথম দিন ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ’, ‘পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় উঠে আসে দেশের নদী-উপনদীগুলোর নানা সংকট এবং করনীয় বিষয়গুলো।
সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে টেকসই, জলবায়ু সহনশীল, বিশুদ্ধ পানির উৎস এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বিনিয়ো বাড়ানোয় অগ্রাধিকারের আহ্বান জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং পানি পরিশোধন ব্যবস্থায় এসব বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
স্কুল থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষার উন্নতি, স্বাস্থ্যবিধি, পানিবাহিত রোগ, প্রজনন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং টেকসই অনুশীলনে জোর দেওয়ার কথাও বলেন আলোচকরা।
পানি জাদুঘর জনপ্রিয়করণ এবং আরও বেশি জনসম্পৃক্তকরণেও জোর দেওয়া হয় সম্মেলনে।
দেশের পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
এবারের সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পানি, নদী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ের উদ্ভাবনীমূলক সমাধান চিহ্নিত ও প্রচার করা, টেকসই এবং সহনশীলনতায় অগ্রসর হওয়া এবং পানি ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ন্যায়সংগত ও ন্যায্যতার দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা।