নেচে নেচে সবাইকে বই পড়তে বলল টুকটুকি। প্রশ্ন করার আহ্বান জানাল ইকরি। হালুম শোনালো মাছ খাওয়ার গল্প। আর নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কারের কথা শোনাল শিকু।
Published : 02 Feb 2024, 01:44 PM
ছোট্ট রাইয়ান একটু পর পর মাকে জিজ্ঞাসা করছিল, “মা হালুম কখন আসবে?” রাইয়ানের মত শতাধিক শিশু ও অভিভাবকদের চোখ তখন মঞ্চের দিকে।
ঠিক পৌনে ১২টায় যখন হালুম মঞ্চে এল, রাইয়ানের চোখে তখন আনন্দের ঝিলিক। করতালিতে মুখর পুরো প্রাঙ্গণ।
একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালটা ছিল শিশুদের। ১১টা থেকে ১টা শিশুপ্রহরে প্রাণখুলে ছুটে বেড়িয়েছে শিশুরা। আর প্রতিবারের মত এবারও বইমেলার শিশুপ্রহরের মূল আকর্ষণ ছিল সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র হালুম, টুকটুকি, ইকরি, শিকু।
সকাল সোয়া ১১টায় মেলার শিশুচত্বরে সিসিমপুর মঞ্চ উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সিসেমি ওয়ার্কশপের বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম, বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মোজাহিদুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
নূরুল হুদা বলেন, "এবার আমরা বইমেলার স্লোগান রেখেছি- 'পড় বই গড়ো দেশ/বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ'। এই বাক্যটির সাথে আরেকটি বাক্য বলব- সেটি হল 'বিশ্বজোড়া বিশ্বদেশ'। আমরা বই পড়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ গড়তে চাই। সেই সাথে বিশ্বের সুনাগরিক হতে চাই। বাংলাদেশ এবং সৃজনশীলতা চিরজীবী হোক।"
উদ্বোধনের পরে একে একে মঞ্চে আসে সিসিমপুরের টুকটুকি, হালুম, ইকরি, শিকু। নাচের তালে তালে শিশুদের মুগ্ধ করে তারা।
নেচে নেচে সবাইকে বই পড়তে বলল টুকটুকি। প্রশ্ন করার আহ্বান জানাল ইকরি। হালুম শোনালো মাছ খাওয়ার গল্প। আর নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কারের কথা শোনাল শিকু।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাসব্যাপী বইমেলায় প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা, বিকেল সাড়ে ৩টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনটি করে শো করবে সিসিমপুর।
বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় শুরু হয়েছে একুশে বইমেলা। এবারের মেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে অনেক অভিভাবক সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসেন। শিশু চত্বরের বিভিন্ন স্টলে গিয়ে তারা বই কেনেন।
ধানমন্ডি থেকে ছেলে নাফিজকে নিয়ে এসেছেন সাবিহা আনজুম। তিনি বলেন, "আমার ছেলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। কিন্তু আমি চেষ্টা করি বাংলা কবিতাও যেন পড়ে। এজন্য তাকে বাংলা বই কিনে দিই। শিশুদের বই রঙিন হলে তারা বেশ আকর্ষণ অনুভব করে। সিসিমপুর থেকে প্রকাশিত বইগুলো ভালো লাগে।"
মেলার মাঠে বসেই 'আবিষ্কারের মজার গল্প' নামে একটি বই পড়ছিল ফারিস্তা। সে জানায়, মেলা থেকেই বইটি কিনেছে।
ফারিস্তার বাবা খোকন আহমেদ বলেন, "আমার মেয়ে বই পড়তে পছন্দ করে। আমিও প্রতি মাসে বই কিনে দিই। আজকে মেলায় এসে বই কিনে এখানেই পড়া শুরু করে দিয়েছে।"
শিশুচত্বরে অধিকাংশ স্টল গোছানো থাকলেও সামনের মাঠ অনেকটাই উঁচুনিচু। কোথাও কোথাও রয়েছে ছোট ছোট গর্ত। অভিভাবকদের কেউ কেউ বললেন, মাঠ সমান করে দিলে সবার হাঁটা নিরাপদ হত।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা বিষয়গুলো দেখছি। পাশাপাশি প্রকাশকদের অনুরোধ করব, তারা যদি স্টলের সামনের জায়গাটা একটি পরিষ্কার রাখেন, তাহলে সুন্দর হয়। অনেকে স্টলের কাজ করে সামনে পড়ে থাকা কাঠের টুকরোগুলোও পরিষ্কার করেননি। অন্তত স্টলের সামনের জায়গাটি পরিষ্কার রাখলে তাদের স্টলটিই সুন্দর দেখাবে।"
ছবিঘর: বই মেলায় প্রথম শিশুপ্রহর