ভালোবাসার অন্য প্রকাশ

মানুষে-মানুষে ভালোবাসার বাইরে পরিবেশ এবং প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশেরও দিন হতে পারে ১৪ ফেব্রুয়ারি।

রিফাত পারভীনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2024, 05:09 AM
Updated : 14 Feb 2024, 05:09 AM

আয়োজন খুব বড় নয়, তবে উদ্দেশ্যটা বড়। হাতে লাল গোলাপ আর মুখে হৃদয়ছোঁয়া হাসি নিয়ে তারা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যান, রোগে ভোগা মানুষগুলোকে পৌঁছে দেন ভালোবাসার বার্তা।

গত কয়েক বছর ধরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইনস ডেতে এ কাজটি করেন সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সন্ধানী গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ইউনিটের সদস্যরা।

আসলে ভালোবাসা ছোট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখার কোনো বিষয় নয়, সেটিই মনে করেন এই ইউনিটের সদস্যরা।

তরুণ-তরুণীদের কাছে দিবসটি প্রেমের দিন হিসেবেই প্রাধান্য পায়, যা ভালোবাসার বহুমাত্রিকতার পরিধিকে সীমিত করে দেয়। ভালোবাসাকে যে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না, এই সহজাত আবেগের বহিঃপ্রকাশও যে আলাদা হতে পারে, তা মানুষ ভুলে যায়।

মানুষে-মানুষে ভালোবাসার বাইরে পরিবেশ এবং প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশেরও দিন হতে পারে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ‘প্রাণে প্রাণ মেলাবার’ মত সর্বপ্রাণবাদী আহ্বান জানানো যায় এমন দিনে।

সন্ধানীর সাভার শাখা কমিটির সভাপতি শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সাকিবুল ইসলাম আকন্দের কথাতেও উঠে এল একই কথা।

“অসুস্থ না হলে হাসপাতালকে মানুষ একটু এড়িয়েই চলে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রোগীদের মুখে আমরা সাধারণত হাসি দেখতে পাই না। তাই ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা থেকে কয়েক বছর ধরে এমনভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি আমরা রোগীদের সঙ্গে উদযাপন করছি।”  

সন্ধানীর সাভার শাখা কমিটিতে সদস্য আছেন ২৮ জন, যারা সবাই গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক। এছাড়া সাধারণ সদস্য আছেন ৪০ জন।

গত কয়েক বছরর মত এবারও রোগীদের শয্যাপাশে গিয়ে ফুল দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান চিকিৎসক সাকিবুল ইসলাম।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে বহুকাল ধরে। পৃথিবীজুড়ে ভালোবাসা দিব্স পালনে থাকে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা।

প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে ৪৯৬ সালে পালিত হয়েছিল। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে দিবসটি নাম পেয়েছে। রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস সাম্রাজ্যের তরুণদের বিয়ে না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদেশ অমান্য করে ভালোবাসার বাণী প্রচার করায় শাস্তিস্বরূপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে ভালোবাসা উদযাপনের দিনটি পালন করা শুরু হয় গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে, একইসঙ্গে পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন। ফলে ঋতুরাজকে বরণের আয়োজনও পরিণত হয় প্রেমের উদযাপনে।

এই দিনে আরো একটি দিবস রয়েছে, সুন্দরবন দিবস। প্রকৃতিকে ভালোবেসে ২৩ বছর আগে ভালোবাসা দিবসের দিনটিকেই সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে দেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন ভালোবাসা দিবসকে পালন করবে অন্যভাবে।

পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ২০১৬ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের সদস্যরা কাজ করছেন। ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ যেন পরিবেশের ক্ষতির কারণ না হয় তাই সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন তারা।

১২ ফেব্রুয়ারি ‘ভালোবাসায় চরম শত্রু’ নামের ৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি তথ্যচিত্র নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে বিডি ক্লিন। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার সচেতনতা কিভাবে সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে মজাচ্ছলে তা এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে।

ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বাড়ে প্লাস্টিক আর আবর্জনা। তাই এ দিন যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক না ফেলা ও সাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করে বিডি ক্লিন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভালোবাসা শুধু মানুষের জন্য নয়, পরিবেশও ভালোবাসা পাওয়ার দাবিদার। বিশেষ দিনটিতে পরিবেশকে ভালোবাসা এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এমন আলাদা রকম আয়োজন।”     

প্রাণীপ্রেমী ফারজানা আক্তার ভালোবাসার দিনটিকে নিজের পোষা বিড়ালের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান।

তিনি বলেন, “মানুষ প্রিয়জনের কাছে নানাভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে। তেমনি প্রাণীর সঙ্গেও ভালোবাসা ভাগাভগি করে নেওয়া যায়। যদিও ভালোবাসার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই, তবে একদিন আয়োজন করে উদযাপন করা যেতেই পারে। মানুষের সঙ্গে অন্যান্য সম্পর্কের মধ্যকার ভালোবাসা এদিনে গুরুত্ব পাওয়া উচিত।”

ভালোবাসা দিবস উদযাপন নিয়ে দুই রকমের মতামত আছে। অনেকেই খুব আয়োজন করে দিবসটিকে উদযাপন করতে পছন্দ করেন। আর অন্য অংশ একদিন ভালোবাসা প্রকাশকে গুরত্বপূর্ণ মনে করেন না।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’র সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর সোনিয়া আক্তার মনে করেন, বিশেষ দিবসগুলো উদযাপন মানসিক স্বাস্থ্য ও সুন্দর সম্পর্ক তৈরির জন্য ইতিবাচক।

“দিবস উদযাপনের ছোট ছোট আয়োজন মনের ওপর তৈরি হওয়া চাপ ও নেতিবাচক ভাবনা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ভালোবাসা প্রকাশে সংকোচ দূর করারও উপলক্ষ্য হতে পারে বিশেষ দিন।”

শুধু প্রিয়জন নয়, বরং আবেগ প্রকাশে বহুমাত্রিকতাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন এই বিশেষজ্ঞ।

আর সন্দেহাতীতভাবেই ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম অনুষঙ্গ হল ফুল। ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস-দিবস যাই হোক, এই দিনে ফুল ছাড়া যেন চলেই না, বিশেষ করে গোলাপ। 

জাপানের একটি গবেষণা সাইট জার্নাল অব সাইকোলজিক্যাল অ্যানথ্রোপোলজিতে বলা হয়েছে, মানসিক চাপ কমাতে গোলাপ ‘দারুণ’ কাজ করে।

ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে শাহবাগের ফুলের বাজার থাকে জমজমাট। বিশেষ করে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফুলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।  

শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমাবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি হবে সব থেকে বেশি। এই মাসের শুরু থেকেই নানা উপলক্ষে প্রচুর ফুল বিক্রি হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এই একদিনেই ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি।”