Published : 06 May 2025, 09:30 PM
রক্ত ও জেগে ওঠা নিহত নর্তকী কিংবা অজস্র তৃণের উৎসব মূর্ত হয়ে উঠেছে শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদারের ক্যানভাসে।
শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গ্যালারিতে শুরু হয়েছে 'ও মৃত্যু ও নৃত্য' শিরোনামে একক চিত্র প্রদর্শনী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।
শিল্পী শাহীনুর রহমান বলেন, “চার পাশে দেখা মানুষের কদর্য, নির্মম, হঠকারী প্রকৃতিবিরুদ্ধতার প্রতিপক্ষে মোবাশ্বির সতত জারি রেখেছে এক চিত্রকলা-প্রতিবাদ।”
আগামী ১০ মে পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে।
ছায়াসভা এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। গত ডিসেম্বর থেকে শিল্পী মোবাশ্বির আলমের আঁকা ছবিগুলো এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রফিকুন নবী বলেন, “মোবাশ্বির ছোট ছোট ছবি এখানে উপস্থিত করেছেন। লাইনিয়ার কাজ, লাইনের ভেতর দিয়ে কাজ করেছেন। কালার পেনস্ ব্যবহার করেছেন, ব্ল্যাক লাইনস ব্যবহার করেছেন। খুব ডিটেইলের কাজ।
“এই যে ডিটেইলের কাজ, এর মধ্যে কিন্তু এমনি এমনি না, ছবিগুলো দেখলে বোঝা যাবে, এমনটা ভাবতে পারি ছবিময় নকশা বা নকশাময় ছবি। এইযে নকশীধর্মী যে ছবিগুলো দাঁড়িয়েছে, তার ভেতরে কিন্তু বিষয় আছে। কিছু বলার এলিমেন্টস আছে। একেবারে নিছক হিজিবিজি দাগ দিলাম, তা নয় কিন্তু।”
“আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, মোবাশ্বির বলে নয়, এখানে উপস্থিত আরও যত শিল্পী আছেন, তাদের জন্য বলি, চট্টগ্রামের শিল্পীদের একটা ধরন আছে। সেই ধরনটা নিরীক্ষাধর্মী ধরণ। এটা চট্টগ্রামের শিল্পীদের একটা স্বভাব।
শিল্পী মোবাশ্বির আলম বলেন, “এ অভ্যাস আমার বেশ পুরনো, আঁকাউকি করা, কাটাকুটি করা। বলতে গেলে, শ দুয়েক খাতাতো জমা আছে। সবগুলোই যে ছবি হয়ে উঠেছে, তা কিন্তু না। রাশেদ যখন বললো, এগুলো সে এক্সিবিট করতে চায়, তখন অন্য কাজের মত আমি এগুলো আঁড়াল করে রাখলাম। ওরাই এগুলো বের করে নিজদায়িত্বে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করল।”
অনুষ্ঠানে শিল্পী ও লেখক আবুল মনসুর বলেন, “আজকের যে প্রদর্শনী, তার ছবিগুলো একটানা আঁকা হয়েছে, তিন মাসে বলা হচ্ছে। যখন আমরা শিল্পকর্মের বিচার করতে চাই, সেটা দ্রুত লেখা হয়েছে না অনেক দিন ধরে লেখা হয়েছে, সেটা কিন্তু বিচারের নয়। কাজী নজরুল ইসলাম তার বিদ্রোহী কবিতা, সেটা অনেক লম্বা কবিতা; তা তিনি একটি রাতে লিখেছিলেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে এক রাতে কবিতাটি লিখেছিলেন।
“আমরা কাছে যেটি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, সেটি হচ্ছে তার উপাদান ব্যবহার; শিল্পের মাধ্যম ব্যবহারে তার প্রচলিত প্রথার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা আছে। তার শিল্পকর্মগুলোর ধরনও আধুনিককালের প্রচলিত ধরনের বাইরে।”
তিনি বলেন, “আরেকটি বিষয়, পরিসর বা স্পেস ব্যবহারে পারঙ্গমতা তার মধ্যে আছে। তিনি একটা দৃশ্যপট এঁকেছেন, কিন্তু সেটি কখনোই কাগজের পুরো পরিসর ধরে নয়।
“তার আকৃতির ভেতরে যেমন নানান আকৃতি আছে, নানান সুক্ষ্ম বিস্তার আছে, তেমনি সার্বিকভাবে সবটা মিলে তিনি যেভাবে পরিসরটা বিন্যস্ত করেছেন, সেখানে তার অনুভূতির রেশটা আমরাও অনুভব করতে পারি। তার মধ্যে ছন্দিতভাব দেখতে পাই, দৃঢ় কাঠামোও দেখতে পাই। নানা কিছু নিয়ে তিনি তার ভেতরের ভাবনার ঢেউগুলোকে মূর্ততা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”
প্রাবন্ধিক ও শিল্প সমালোচক অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, “গত ৩০ বছর বা তার বেশি সময়ে মোবাশ্বির কোনো এক্সিবিশন করে নাই। এ এক্সিবিশন করা হয়েছে খুব অল্পসময়ের কিছু কাজ নিয়ে। সেই সময়টা হল ডিসেম্বর থেকে মার্চ। এটা একটা ঘোর লাগা অবস্থা; দশায় পাওয়া মানুষের মত। এমন একটা সৃজন বেদনায় সে ব্যথিত হয়েছে, যেটি তাকে ছবির মধ্যে ধরে রেখেছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদারের সঙ্গে প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা।