Published : 29 Jun 2024, 11:49 PM
যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, আদেশটি ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের বিচার ব্যবস্থাকে বহির্বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হতে পারে।
“তাই এ আদেশকে হালকাভাবে দেখা বা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ও শহীদুল্লাহ কায়সারসহ ১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ২০১৩ সালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীন ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে পলাতক। বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি দেশটির নাগরিকত্ব পান ১৯৮৪ সালে।
২০১৯ সালে যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের ফৌজদারি অপরাধের বিবরণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সেই প্রতিবেদন তখনকার টুইটার (বর্তমানে এক্স) হ্যান্ডলে শেয়ার করেন।
তবে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে তাকে সরকারি নথিতে চিহ্নিত করায় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেন মুঈনুদ্দীন। ৬০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা সেই মামলা দুই দফায় খারিজ হলেও মামলার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি।
গত ২০ জুন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট তাকে মামলা করার সুযোগ দিয়ে রায় দেয়।
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কাজ করা আইন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের মামলায় মুঈনুদ্দীন যদি জিতে যান, তাহলে অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবেন দণ্ডিতরা।
একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও ‘কষ্টের কথা’ তুলে ধরে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে রায় কার্যকরে আকুতি জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানরা।
এবার তাতে যোগ দিয়ে সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম বলছে, “সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মনে করে, যুক্তরাজ্য বা অন্য কোনো দেশের আদালতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়।”
তবে বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছে সংগঠনটি।
মুঈনুদ্দীনের পক্ষে যুক্তরাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তটিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে যে রায়গুলো দিয়েছে, সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হতে পারে বলে মনে করছে এই ফোরাম।