গণপরিবহনে সহিংসতার শিকার হলে নারীরা তাৎক্ষণিকভাবে ‘হেল্প’ অ্যাপের মাধ্যমে সহায়তা চাইতে পারবেন, বলা হয় অনুষ্ঠানে।
Published : 15 Mar 2025, 09:00 PM
‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নারী নিপীড়ন’ শব্দ দুটি ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
তিনি বলেন, “আমি দুইটা শব্দ খুব অপছন্দ করি, আমি অনুরোধ করব এই দুইটা শব্দ বলবেন না। একটা ভুলে গেলাম, একটা এবার বলি। সেটা হল- ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করবেন না প্লিজ। আমাদের শুনতে খুব খারাপ লাগে। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বলবেন, নারী ‘নিপীড়ন’ বলবেন।
“আমাদের যে আইনটি আছে এটাও ‘নারী ও শিশু নির্যাতন’, ‘এখানেও কোনো এ ধরণের শব্দ…মূল হেডিং ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন’। সো যে শব্দগুলা শুনতে খারাপ লাগে আমরা না বলি।”
শনিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার ভবনে ‘হেল্প’ (হ্যারেজমেন্ট এলিমিনেশন লিটারেসিন প্রোগ্রাম) নামে গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তায় সহায়ক একটি অ্যাপ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
মাগুরায় ‘ধর্ষণের শিকার’ হয়ে এক শিশুর মৃত্যু ও দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন অপরাধ বাড়ার পরিস্থিতির মধ্যে ‘হেল্প’ অ্যাপটি উদ্বোধন হল।
এছাড়াও ‘মব’ তৈরি করে অপরাধের কয়েকটি ঘটনার পাশাপাশি গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে।
ডিএমপি কমিশনার গণমাধ্যমে এমন কোনো ঘটনা না দেখাতে অনুরোধ করেন, যা দেখলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়।
গুলি করে ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা একটি টেলিভিশনে ‘বার বার দেখানো’ হচ্ছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, “এসবি থেকে রিপোর্ট করছিল, কতবার দেখানো হইছে। আমি রিক্যুয়েস্ট ওইদিন করছি প্রেসকে। যে প্লিজ এ ধরনের ঘটনা, যেগুলো মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টি করে। সেন্স অব ইনসিকিউরিটি ডেভেলপ করে। আপনারা পেশাগতভাবে দায়িত্ব থেকে এটা প্লিজ দেখবেন। যাতে এমন কোন ‘সিন’, ‘অবসিন’ যদি বারবার না দেখান, তাহলে আমার মনে হয় ভাল হয়।”
গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা বার বার দেখালে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এটা কাজ করবে যে তাহলে বোধহয় আর এ শহরে বসবাস করা গেল না।
তবে গুলি করার ঘটনা খুবই কম দাবি করে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, “ছিনতাইয়ের ঘটনা বিগত রোজা শুরুর পর থেকে আমার জানামতে খুবই কম। একটি রিপোর্ট হইছে আমাদের কাছে। একজন কল সেন্টারের মহিলা কর্মী, উনি যাচ্ছিলেন তার ব্যাগটা এক হোন্ডাচালক টান দিয়ে নিয়ে গেছে। তার একটা মোবাইল ছিল নিয়ে গেছে। এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনা ইনশাল্লাহ নাই। বাকি আমাদের টার্গেট, ঈদ পর্যন্ত ভালো থাকতে পারি যাতে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হেল্প অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহনে কোনো নারী সহিংসতার শিকার হলে তাৎক্ষণিক সহায়তা চাইতে পারবেন, জরুরি সেবা নিতে পারবেন এবং ঘটনাটি রিপোর্ট করতে পারবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের উদ্যেগে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে ঢাকার বছিলা থেকে সায়েদাবাদ সড়কে প্রাথমিকভাবে এ অ্যাপটি চালু করা হবে।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলা বাসে কিউআর কোড স্থাপন ও এই অঞ্চলে অবস্থানরত স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় সহিংসতার শিকার নারীরা এই সেবা নিতে পারবেন।
গণপরিবহনে হেল্প অ্যাপে পাওয়া অভিযোগকে প্রাথমিক অভিযোগ বা এফআইআর হিসেবে ধরে পুলিশ কাজ করবে বলেছেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, “সে ক্ষেত্রে কাউকে থানায় যেতে হবে না। এর পর থেকেই যখন কোনো অ্যাকশনের দরকার হবে, এটা ধরেই আমরা মামলা নেব।”
“নারী ও শিশুদের উপর যেকোন ধরনের সহিংসতা পীড়াদায়ক। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিগণ তা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করতেও দ্বিধাবোধ করেন। তাছাড়া তাদের অভিভাবকেরা ও নানা কারণে ঘটনাগুলো গোপন রাখেন।”
“গৃহকর্মীরা আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত। অনেক সময় তারাও শ্লীলতাহানির শিকার হয়। সুনাগরিক হিসেবে গৃহকর্মীদের থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার এর সভাপতি রেজোয়ানুল হক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম।