Published : 08 Jan 2025, 12:20 AM
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় জেলেদের ওপর নির্যাতন চালানোর যে অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তুলেছেন, তা অস্বীকার করে তা ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষ এই কথা বলেছে।
বিভিন্ন সময় আটক হয়ে ভারতে বন্দি থাকা ৯০ জন বাংলাদেশি জেলে রোববার দেশের পথে রওনা হন। সে দিন বাংলাদেশের কারাগারে থাকা ৯৫ জন ভারতীয় জেলে রওনা হন নিজ দেশের পথে।
এই ১৮৫ জন জেলের হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমাঞ্চলীয় আন্তর্জাতিক জলসীমায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, সোমবার ভারতীয় জেলেদের সহায়তা দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতা। সেখানে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি জানতাম না। পরে দেখলাম কয়েকজন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। তারা প্রথমে চুপ থাকলেও পরে বলেছেন যে, তাদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে।
“তাদের দুই হাত বেঁধে রাখা হয়, রড দিয়ে মারধর করা হয়। তাদের কোমর থেকে পা পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন।”
মমতা বলেন, ‘এসব জেলে জেনেবুঝে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করেনি। তারা পরিস্থিতির শিকার।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষ।
সংবাদমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ২ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলা কারাগার থেকে ৩১ জন এবং বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে ৬৪ জন ভারতীয় জেলেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
“মুক্তি দেওয়ার সময় ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। হস্তান্তরের সময় এসব জেলে কারাগারে নির্যাতনের কোনো অভিযোগ তোলেননি। সব বন্দিকে কারাগার থেকে সুস্থ অবস্থায় মুক্তি দেওয়া হয়। এই বিষয়ে সহকারী সার্জনের মাধ্যমে সুস্থতার উপযুক্ত সনদও দেওয়া হয়।”
কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, “কারাগারে তারা ভালো ব্যবহার ও সুচিকিৎসা পেয়েছেন। বাংলাদেশি বন্দি ও ভারতীয় জেলেদের একই অধিকার দেওয়া হয়। এক পোশাকে আসায় কারা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শীতবস্ত্রসহ সব ধরনের পোশাকও তাদের দিয়েছে।”
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, “ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘নিউজবাংলায়’ মুক্তি পাওয়া একজন জেলে বলেছেন, কারাগারে তাদের ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। সুতরাং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অভিযোগ সত্য নয়।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ভারতীয়দের ছয়টি ট্রলার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বাংলাদেশি জলসীমায় ঢুকে পড়ে। সেসব ট্রলারে মোট ৯৫ জন জেলে ছিলেন।
২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ভারতের ৯৫ জেলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের ট্রলার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশের কারাগারে সব সময় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বন্দির প্রতি সমান আচরণ করার বিষয়টি তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, “বিদেশি বন্দিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ খেয়াল রাখা ছাড়াও কারাগারে সব ধর্মের বন্দিদের নিজ ধর্ম বা উৎসব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়।
“কারা অধিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের একটি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান।”
অভিযোগটি ‘অসত্য’ উল্লেখ করে এবং প্রতিবাদ জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, “আমরা আশা করছি সব দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংবেদনশীল বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে তাদের উত্থাপিত তথ্য কিংবা বক্তব্যের সঠিকতা নিশ্চিত করবেন, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।”
পুরনো খবর:
অবশেষে দেশের পথে বাংলাদেশ-ভারতের ১৮৫ জেলে, মাঝ সাগরে হস্তান্তর
সাগরে হবে বিনিময়: দেশে ফিরছেন ৯০ জেলে, ভারতে ফিরবেন ৯৫ জন