পিনুপুত্রকে বাঁচাতে কোনো চেষ্টা হচ্ছে না: পুলিশ

জোড়া খুনের অভিযোগ থেকে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2015, 12:23 PM
Updated : 14 June 2015, 02:25 PM

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, এমপির ছেলে হলেও কাউকে ছাড় না দেওয়ার অবস্থান রয়েছে সরকারের।

জোড়া খুনের মামলার গ্রেপ্তার রনিকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তার জামিনের আবেদনের শুনানি হবে ১৬ জুন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও রিমান্ড শেষে রনিকে আদালতে নেওয়ার পর পুলিশ যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে এই এমপিপুত্রের গুলিতে নিহত হওয়ার কথা লেখা নেই।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড এবং গুলি সম্পর্কে বখতিয়ার রনির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশ রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে দাবি করেছে। তবে বখতিয়ার এই হত্যা করেছে বা তার গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন এমনটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি।”

তদন্ত কর্মকর্তা আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্যও কোনো আবেদন করেননি।

মা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য পিনু খান মহিলা আওয়ামী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতার ছেলেকে বাঁচাতে চাইছে পুলিশ। 

এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম রোববার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ পেশাগত দক্ষতা নিয়ে ক্লু লেস ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করেছে।

“এই মামলা তদন্তে পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। মামলাকে প্রভাবিত করার জন্য কোনো মহল থেকে চাপ নেই বা সুযোগ নেই।”

“মামলা তদন্তে কারও মাতৃপরিচয় বা পিতৃপরিচয় কিংবা সামাজিক পরিচয় পুলিশের কাছে বিবেচ্য নয়। অন্য পাঁচটা খুনির মতো গোয়েন্দা পুলিশ তাকে (রনিকে) দেখছে,” দাবি করেন মনিরুল।

এদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ঢাকায় এক কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “মন্ত্রীর আত্মীয় বা যার আত্মীয়ই অপরাধ করুক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”

গত ১৩ এপ্রিল রাতে রাজধানী নিউ ইস্কাটনে রনির গুলিতে এক অটোরিকশা চালক এবং এক রিকশাচালক মারা যান বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিহত রিকশাচালক আব্দুল হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ঘটনার দুদিন পর থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে বলা হয়, একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হলে তার ছেলে ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী মারা যান।

তবে পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সাদা মাইক্রোবাস নয়, সেটি ছিল কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ি এবং ওই গাড়িতে পিনু খানের ছেলে রনিসহ কয়েকজন ছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “যারা প্রথমে এই হত্যার ঘটনায় মামলা করেছিল, তারা ঘটনাস্থলের পাশের লোকজনের মুখে শুনে সাদা মাইক্রোবাসের কথা লিখেছিলেন। পরে পুলিশ বিভিন্ন কৌশল প্রযোগ করে কালো প্রাডো গাড়িটির বিষয়ে জানতে পারে।”

যে গাড়িটিতে রনি ছিলেন তার মালিক তার মা পিনু খান। তদন্তের স্বার্থে গাড়িটি জব্দ করার পরিকল্পনা হয়েছে বলে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল জানান।

তদন্তে রনির সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর গত ৩১ মে তাকে এবং তার গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার জানিয়েছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “রনির গাড়িচালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন যে রনি গভীর রাতে তার গাড়ি থেকে গুলি ছোড়ে। সেই গাড়িতে প্রথমে তিনজন ছিল। ঘটনার আগে একজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের পুলিশ মামলার তদন্তের স্বার্থে খুঁজছে।”

গ্রেপ্তারের পরদিন ১ জুন গাড়িচালক ইমরান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও রনি দেননি। এরপর পুলিশ রনিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করলে চার দিন রিমান্ডের আদেশ দেয় আদালত।

তবে রনি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়লে তাকে রিমান্ডে নেওয়া যাচ্ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছিল, তখন এমপিপুত্রকে বাঁচাতে চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এরপর গত ১৬ জুন রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়, বিচারক তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।