রোহিঙ্গা খুঁজতে ইসির নিশানায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম

অগাস্টে আঠারোর কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের চার জেলায় তদন্ত দল পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2015, 07:48 AM
Updated : 4 June 2015, 07:48 AM

এতদিন কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলায় ইসির নজর থাকলেও এবার চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িকেও ‘টার্গেট’ করেছেন কমিশনের কর্মকর্তার।

এর অংশ হিসাবে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলা, খাগড়াছড়ির সাত উপজেলা, বান্দরবানের আরও তিন উপজেলা ও রাঙ্গামাটির আরও সাত উপজেলায় উপ সচিব পর্যায়ের চার কর্মকর্তাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। রোজার আগে হয়তো তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে তদন্ত শুরু করবেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বৃহস্পতিবার কমিশনের বৈঠকে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে।

“ঈদের পরে অগাস্টে কাজ করার প্রস্তাব রয়েছে আমাদের। তথ্য সংগ্রহ শুরুর আগে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকা পুননির্ধারণের জন্যে ইসির টিম পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।”

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা দুই যুগ আগে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়ার পর তাদের অনেকে বাংলাদেশি ভোটার তালিকায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে।

এসব রোহিঙ্গা পরে বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধমূলক তৎপরতায় অংশ নিয়ে ধরা পড়ার পর তাদের পরিচয় ফাঁস হয়। এরপর থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সতর্ক সরকার।

২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে।

এরপর সম্প্রতি কক্সবাজারে এরকম ৯৮ জন রোহিঙ্গাকে সনাক্ত করে তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

ভোটার হতে ‘মরিয়া’ রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে ইতোমধ্যে ১৪টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করেছে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার আট উপজেলা, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের ছয় উপজেলা রয়েছে।

ইসির তথ্যভাণ্ডারে আঠারোর কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করার আগে বৃহত্তর চট্টগ্রামে আরও কোথাও রোহিঙ্গা বসতি রয়েছে কিনা তা সরেজমিনে তদন্তের এই সিদ্ধান্ত হয় গত ১২ মে কমিশনের ১১২তম সভায়।

কমিশন বলছে, ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা অবস্থান পরিবর্তন করে। অবৈধভাবে বসবাসকারী এই রোহিঙ্গারা ১৪ উপজেলা ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসির উপ সচিব আব্দুল অদুদ জানান, কক্সবাজারের সব উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকার কাজে বিশেষ ফরম ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্বত্য তিন জেলার কয়েকটি উপজেলাতেও হয়েছে এ ব্যবস্থা।

“কিন্তু চট্টগ্রামেও রোহিঙ্গা বসতি সনাক্ত হওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকা সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়া জন্যে ইসি কর্মকর্তাদের টিম পাঠানো হবে।”

ইসির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শিগগিরই উপ সচিব পর্যায়ের চারটি দল চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে যাবে বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান।

বিশেষ এলাকা

ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার জানান, কক্সবাজারের সদর, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী, বান্দরবানের সদর, আলিকদম, লামা, নাইক্ষংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই- এই ১৪ উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নতুন করে তদন্ত হবে আরও অন্তত ৩০ উপজেলায়। এগুলো হল- চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, রাউজান, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, হাটহাজারী ও মিরসরাই; খাগড়াছড়ির সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা; বান্দরবানের রুমা, থানছি ও রোয়াংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির সদর, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, লঙগদু, নানিয়ারচর, বরকল, রাজস্থলী।