বাংলাদেশে ‘নিখোঁজ’ হওয়া বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ কীভাবে শিলংয়ে এলেন, তা বের করতে তদন্ত শুরু করেছে মেঘালয় পুলিশ।
Published : 13 May 2015, 09:18 PM
মেঘালয় পুলিশের আইজিপি (অপারেশন) জিএইচপি রাজু বলেন, “কীভাবে তিনি শিলংয়ে এলেন তা বের করতে আমরা চেষ্টা করছি। তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন, তিনি একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার মতো ব্যক্তি তিনি নন।”
মেঘালয় সিভিক হাসপাতালে সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকায় এখনও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি পুলিশ। ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে তিনি যে বর্ণনা দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখছেন তারা।
সালাহ উদ্দিন মেঘালয় পুলিশকে বলেছেন, ঢাকার উত্তরা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে অপহরণ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব। তার বয়স ৫৪ বছর এবং তিনি যে কোনো মূল্যে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান।
“তিনি বলছেন, তিনি কিছু মনে করতে পারছেন না। অপহৃত হওয়ার পর কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কীভাবে শিলং এলেন সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না, তাহলে তিনি কীভাবে স্ত্রীর ফোন নম্বর মনে করতে পারলেন,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেঘালয় পুলিশের এক কর্মকর্তা একথা বলেন।
তিনি বলেন, “তিনি (সালাহ উদ্দিন) যদি স্মৃতিভ্রষ্ট হন বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন যেমনটি প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছিল, তাহলে তিনি কীভাবে তার স্ত্রীর ফোন নম্বরের মতো নম্বর মনে করতে পারলেন।”
বাংলাদেশে তাকে অপহরণকারীরা কেন তাকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শিলংয়ের মতো জায়গায় ফেলে গেলেন, যেখানে বাংলাদেশিদের যাতায়াত তেমন নয়-সে প্রশ্নও আসছে।
“কলকাতা বা আগরতলা হলে বুঝতাম, কারণ ওই সব জায়গায় বাংলাদেশিরা প্রায়ই যাতায়াত করে। কিন্তু বেশিরভাগ বাংলাদেশির জন্যই শিলং আসাটা সচরাচর ঘটে না,” বলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ব্যাপকভাবে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগের কোনো প্রমাণও শিলংয়ের হাসপাতালের চিকিৎসকরা পাননি।
তাই একজন বাংলাদেশি রাজনীতিক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কীভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে পারেন এবং তার বক্তব্য অনুযায়ী তাকে অপহরণ করা হলে তারপর আর কিছু মনে করতে না পারাটা তাদের কাছে অদ্ভুত ঠেকছে।
এ ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশের দুর্বল সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিশেষত ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো যেখান থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের সুবিধার জন্য প্রায়ই সীমান্ত ব্যবহার করেন তার দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে।
বাস্তবে এই সীমান্তে তৎপর এইচএনএলসির মতো জঙ্গি গ্রুপগুলো অপহরণের পর বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়। এরকম ভুক্তভোগী অনেকেই বলেছেন, জঙ্গলের পথ ধরে তাদের বাংলাদেশে নেওয়া হয়েছিল।
এ ধরনের গ্রুপগুলোর বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য রয়েছে। তবে সালাহ উদ্দিনের পরিবারের কাছে কখনও মুক্তিপণ দাবি করা হয়নি এবং তার পরিবার সব সময় দাবি করে আসছিলেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরই তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে।
শিলংয়ে সালাহ উদ্দিনের উপস্থিতি বিএসএফের ভূমিকাকেও প্রশ্নের মধ্যে ফেলেছে। বাহিনীটির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে সম্প্রতি বিএসএফের অনেকগুলো নতুন স্কিম চালুর ঘোষণা দেন বাহিনীটির প্রধান ডিকে পাঠক।
শিলং অঞ্চলের দায়িত্বরত বিএসএফের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এস কে সিং বলেছেন, গ্রেপ্তার বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠাতে বলা হলে তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ মেঘালয় পুলিশকে বলেছেন, বাংলাদেশে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি তাকে অপহরণ করেন। একটি মারুতি জিপসি গাড়িতে করে তাকে এনে চোখ বাঁধা অবস্থায় শিলংয়ে তাকে ফেলা হয়।
সালাহ উদ্দিন যদি চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকেন, তাহলে তিনি কীভাবে গাড়িটি কোন কোম্পানির তা সনাক্ত করতে পারলেন সে প্রশ্নও উঠেছে।
“মেঘালয় বা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অন্য কোনো স্টেট দিয়ে সালাহ উদ্দিনের সীমান্ত পাড়ির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ,” বলেন পুলিশ প্রধান রাজু।
মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস জেলার পুলিশ প্রধান এম খারক্রাং বলেন, অনুপ্রবেশের দায়ে সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা বা অন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা হয়েছে।
প্রথমে শিলংয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তির পর সালাহ উদ্দিনকে সিভিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকদের তথ্যমতে, তিনি হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন।
সালাহ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতাল থেকে তার ছাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।
সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার নিয়ে ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে অবহিত করা উচিত বলে নয়া দিল্লি হাই কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন।