সুন্দরবনের শেলা নদীতে সব ধরনের নৌ যান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সুপারিশ করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
Published : 14 Dec 2014, 04:03 PM
এছাড়া নদী থেকে যারা তেল সংগ্রহ করছে- তাদের চর্মরোগের ঝুঁকি আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিকিৎসক দল পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বৈঠকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বৈঠকে ওই এলাকায় নৌ রুট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।”
গত মঙ্গলবার শেলা নদীর মৃগামারী এলাকায় একটি কার্গোর ধাক্কায় সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। পরদিন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই রুট দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
স্থানীয়রা হাঁড়ি-পাতিল ও স্পঞ্জ ব্যবহার করে নদী থেকে যে তেল সংগ্রহ করছেন তার দাম বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে বলে উপমন্ত্রী জানিয়েছেন।
“সভায় তেল কেনার জন্য মোবাইল পারচেইজ সেন্টার এবং সংগৃহীত তেলের ক্রয় মূল্য বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।”
জ্যাকব বলেন, “বর্তমানে একশ নৌকা দিয়ে তিনশ কর্মীর মাধ্যমে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে। কমপক্ষে ৫০০ নৌকা দিয়ে লোকজনকে উৎসাহ যুগিয়ে তেল সংগ্রহ করার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেছেন, শেলা নদীতে শনিবার ডলফিন দেখা গেছে এবং সেগুলোর আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি।
“আমাদের কাছে তথ্য আছে, গতকালও সেখানে ডলফিন দেখা গেছে। ডলফিন নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মিস্টার ব্রায়ন ও বাংলাদেশের একজন লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা ডলফিন দেখেছেন।
“ডলফিনের গায়ে তারা কোনো তেল দেখেননি এবং ওই সব ডলফিনের কোনো অসুস্থতা বা অস্বাভাবিকতা তারা লক্ষ্য করেননি।”
রোববার একটি সংবাদমাধ্যমে মৃত ইরাবতী ডলফিনেরর ছবি প্রকাশের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, “সম্ভবত সেটি ডলফিন নয়। বিষয়টি জেনে আপনাদের জানানো হবে।”
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর তেল দূষণের ভবিষ্যৎ প্রভাব কেমন হতে পারে সে বিষয়ে খন্দকার রাকিবুর বলেন, “পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হবে, কতটুকু হবে তা এখন নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বোঝা যাবে।”
এতে বন ও জলজ প্রাণির তেমন ক্ষতি হবে না বলে নৌপরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, “নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেছেন তার নিজের কথা। আমরা কোনোটা চ্যালেঞ্জ করিনি বা খণ্ডন করিনি।
“সুন্দরবনের পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হবে।”
তেল দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনতে বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা বিদেশিদের সহযোগিতা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সচিব।
তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তেল ছড়ানো নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য নাকচ করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, “আজ একটি মিডিয়ায় এসেছে সাড়ে তিনশ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল ছড়িয়েছে, আসলে তা সঠিক নয়। ঢাকা থেকে ওই স্পটের দূরত্বও সাড়ে তিনশ কিলোমিটার না। আমরা যত দূর জেনেছি, ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে তেল ছড়িয়েছে।”